ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

তাবলিগের ১২ কাজ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ১১:২২ এএম
ইজতেমার ময়দান। ছবি: সংগৃহীত

তাবলিগ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রচার করা, পৌঁছে দেওয়া। ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যম হলো  দাওয়াত ও তাবলিগ। এ কাজের কারণে এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে। বর্তমান তাবলিগ জামাত বলে পরিচিত কার্যক্রমের সূচনা গত শতাব্দিতেতে ভারতের মেওয়াত অঞ্চলের মাওলানা ইলিয়াস রহিমাহুল্লাহর মাধ্যমে। তাবলিগের বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এখানে মূল ১২ কাজ তুলে ধরা হলো-

ছয় সিফাতের আমল 

তাবলিগের ছয় সিফাত হলো- ঈমান, নামাজ, ইলম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, বিশুদ্ধ নিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলিগ।

ঈমান হলো আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো উপাসক নেই; মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিমের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করা ফরজ। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ জেনে তদানুযায়ী আমল করতে সহায়ক জ্ঞানার্জন ফরজ। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা হলো জিকির। বড়কে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ করা একরামুল মুসলিমিন। নিয়তকে শুদ্ধ করা আবশ্যক। সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহর দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারই হলো দাওয়াত ও তাবলিগ। এই ছয় সিফাতের বাস্তবায়ন করা।

মাশওয়ারা

মাশওয়ারা বা পরামর্শ করা আল্লাহতায়ালার আদেশ, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত ও মুমিনের গুণ। পরামর্শের মাধ্যমে কল্যাণ ও বরকত হয়, আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।

তালিম

ইসলামি জ্ঞানার্জন করাকে তালিম বলে। জামাতে চার ধরনের তালিম হয়—এক. কিতাবি তালিম। দুই. কোরআনি তালিম। তিন. ছয় সিফাতের আলোচনা ও চার. ফরজিয়াতের (আবশ্যকীয় বিষয়) আলোচনা। 

মসজিদের ভেতর-বাইরের কাজ

মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের মধ্যে একজন ঈমান-একিনের কথা বলবে, কয়েকজন শুনবে, একজন জিকিরে থাকবে এবং কয়েকজন এস্তেকবালে (আগত মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে গ্রহণ করা) থাকবেন। মসজিদের বাইরে একজন রাহবার (যে পথ দেখায়), মুতাকাল্লিম (যে কথা বলে), কয়েকজন মামুর (যারা শুধু শুনবে, কথা বলবে না) ও একজন জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) থাকবেন। 

গাশত

আল্লাহর ও দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘোরাফেরা করা।

গাশত কয়েক প্রকার

১. উমুমি গাশত—বয়ানের মাধ্যমে যে গাশত করা হয়। ২. খুসুসি গাশত-ব্যক্তি বিশেষের কাছে যে গাশত করা হয়। ৩. তালিমি গাশত—তালিম চলাকালে গাশত। ৪. তাশকিলি গাশত—তাবলিগ জামাত বের হওয়ার জন্য গাশত করা। ৫. উসুলি গাশত—দাওয়াতে যারা তৈরি হয়েছে, তাদের মসজিদে নিয়ে আসা। 

বয়ান

আসর, মাগরিব ও ফজর নামাজের পর বয়ান করা। মাগরিবের পর বয়ানে ছয় সিফাতের আলোচনা করে তাশকিল করবে। ফজরের পরের বয়ানেও ছয় সিফাতের আলোচনা করবে। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন তাসবিহ ও মাসনুন দোয়া আদায়ের ফজিলতের বর্ণনা করবে। 

মোজাকারা

তাবলিগ জামাত ও দ্বীন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মোজাকারা বা আলোচনা করা। যেমন—জামাতবদ্ধ আমলের মোজাকারা, আমির ও মামুরদের মোজাকারা, মসজিদের মোজাকারা, ফরজের মোজাকারা, দাওয়াতি কাজের মোজাকারা ও প্রয়োজনীয় কাজের মোজাকারা। 

পাঁচ কাজ

দাওয়াত ও তাবলিগে পাঁচ কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পাঁচ কাজ হলো- মাসে তিন দিন সময় লাগানো, প্রতি সপ্তাহে দুবার গাশত করা, প্রতিদিন দুটি তালিম করা, প্রতিদিন দাওয়াতি কাজ করা এবং প্রতিদিন পরামর্শ করা। 

মাস্তুরাত

নারীদের জন্যও দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করা আবশ্যক। তারা প্রথমে মাহরামের সঙ্গে তিন দিন করে তিনবার তাবলিগে যাওয়ার পর ১০ বা ১৫ দিনের জন্য যাবে। এরপর চিল্লা (৪০ দিনের জামাত) দেবে। ঘরে তালিমের ব্যবস্থা করবে। প্রতি সপ্তাহে মাস্তুরাতের পয়েন্টে গিয়ে তালিম ও বয়ানে অংশগ্রহণ করা উচিত।

তাশকিল

জামাতের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে মানুষকে তাবলিগ জামাতে বের হওয়ার জন্য যে আহ্বান করা হয়, তাকেই মূলত তাশকিল বলা হয়।   

তারুফি কথা

জামাতে বের হওয়ার প্রথম দিন নিজেদের মধ্যে পরিচিতিমূলক যে কথা হয়, তাকে তারুফি কথা বলা হয়। জামাতের সাথিরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। জামাত মসজিদে যাওয়ার পর এলাকার মানুষকে এ সম্পর্কে অবগত করার বিষয়টিকেও তারুফি কথার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়। 

এলান

তাবলিগ জামাতের বিভিন্ন আমলের জন্য মসজিদে বিভিন্ন সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, একেই মূলত এলান বলে।