ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের আগ্রাসনে সীমাহীন হত্যা-নির্যাতনের শিকার গাজাবাসী এখন অনাহারেও মরছে। ক্ষুধার মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকাটি।
আটার গুদাম খালি থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় সব বেকারি ও খাদ্যের দোকান। আর এতেই দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। মাঝে মাঝে নষ্ট আটার রুটি মিললেও তার দাম আকাশচুম্বী।
এক রুটির দামই এখন প্রায় ৭শ টাকা। এসব রুটি কেনার সামর্থ্যও নেই অনেক ফিলিস্তিনির। এক কথায়, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে আটকা পড়েছে গাজা।
ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধও জোরালো করেছে গাজায়। এর ফলে, ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সর্বাধিক মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলোও অদৃশ্য হয়ে গেছে গাজায়। সেখানকার মানুষের জন্য এক বেলা খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
মাঝে মাঝে আটা পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে অসম্ভব দামে। প্রাপ্য তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বস্তা আটার দাম এখন ১৬,৬৯১ টাকা। রুটির দামও ১৬৬ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬৭ টাকায়।
বেকারি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আবদুল নাসের আল-আজরামি জানিয়েছেন, ৬৮টি বেকারি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। যেনতেনভাবে চলছে ১৮টির মতো ছোট ছোট বেকারি। সংকট পড়ছে আটার জোগানেও। যেগুলো আটা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোও আবার পোকামাকড়ে ভরা।
এছাড়া আটা পাওয়া গেলেও রুটি বানানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানিও নেই উপত্যকাটিতে। ফলে রুটি বানানোর আদিম যুগের পদ্ধতিতে ফিরেছেন অনেকেই। তৈরি করেছেন মাটির চুলা। যা স্থানীয়ভাবে ‘ট্যাবুন’ নামে পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের যা কিছু আছে তা নিয়েই চুলার পাশে জড়ো হন বাস্তুচ্যুত নারীরা। প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়ে একসঙ্গে রুটি বানান। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এ অল্পটুকু খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েই বেঁচে আছেন তারা।’
বাস্তুচ্যুত মা শাইমা তিক্তভাবে বলেছেন, ‘আমি জানি আমি আমার সন্তানদের বিষ খাইয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমার আর কোনো উপায় নেই।’ গাজার শেষ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ‘এক টুকরো রুটি’। যার জন্য লড়ছে মানুষ। দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
উপত্যকাটিতে এখন এক টুকরো রুটি বেঁচে থাকা, ত্যাগ ও হতাশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো ইসরায়েলের এই অবরোধকে ইচ্ছাকৃত দুর্ভিক্ষের অভিযান বলে নিন্দা করেছে।’
সূত্র: এপি