চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলোচিত মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। শতকোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় জামানতের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে মামলার বাদীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। আর এতে বাধ্য করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব ও ভয়ভীতির মাধ্যমে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এভাবে স্বাক্ষর নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আসামিদের জামিনের পথ তৈরি করছে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মামলা করা বা কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা না যায়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মধুমতির আরামবাগের গ্রাহক সেবা অফিসে ডেকে এনে বাদীদের কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে তাই কিছু শর্তে স্বাক্ষর করুন। কিন্তু শর্তগুলো কী, তা গ্রাহকদের দেখাতে অস্বীকৃতি জানায় তারা।
এমন ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ২ লাখ টাকা পাওনা। অফিসে ডেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি বলি কী লেখা হবে তা আগে দেখতে চাই। তারা দেখায়নি। তাই আমি স্বাক্ষর করিনি।
কয়েকজন বাদী অভিযোগ করেন, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের (বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট) নেতাদের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, আমি স্বাক্ষর না করায় এক নেতা ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, টাকা ফেরত চাইলে স্বাক্ষর করতে হবে।
মধুমতির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে কিছু শর্ত লেখা হবে। এর মধ্যে থাকবে নতুন মামলা করা যাবে না, কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যাবে না এবং আসামিদের জামিনে কোনো আপত্তি থাকবে না।
২০২২ সালে মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৪০০টির বেশি মামলা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এখন পর্যন্ত বাদীদের আর্থিক দাবি প্রায় ৩২ কোটি টাকা হলেও বাস্তব ক্ষতি আরও অনেক বেশি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোর্শেদ জানান, বাদী ও আসামিপক্ষ চাইলে আদালতের অনুমতিতে আপসে টাকা ফেরতের ভিত্তিতে জামিন হতে পারে। তবে জোর করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বিষয়টি গুরুতর।