ইসলামে যুদ্ধের ময়দানেও শিশু হত্যার অনুমতি নেই। যুদ্ধ করতে গিয়েও আবেগতাড়িত হয়ে কেউ যেন নিরপরাধ মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষতি করে না বসে, সেজন্যও ইসলাম দিয়েছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
ইসলাম চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নৃশংসতা পরিহার করে ন্যায়নীতি অনুসরণ ও মানবাধিকার রক্ষার তাগিদ দেয়। এমনকি ইসলাম রক্তপাত বন্ধের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে বলে। যুদ্ধ-সংঘাতের পরিবর্তে শান্তি ও সন্ধিকে অগ্রাধিকার দেয়। সন্ধির সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেই কেবল যুদ্ধের অনুমতি দেয়।
এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তারা সন্ধির প্রতি ঝোঁকে, তবে আপনিও তাতে সাড়া দিন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল: ৬১ইসলামে যুদ্ধক্ষেত্রেও যাদের হত্যা করা নিষিদ্ধ, তাদের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো-
শিশু, নারী ও বৃদ্ধ
যুদ্ধাক্রান্ত অঞ্চলে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাতে মহানবী (স.) নিষেধ করেছেন। বিশেষত নিরপরাধ নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা যুদ্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নেবে, আল্লাহর ওপর ভরসা করবে এবং আল্লাহর রাসুলের মিল্লাতের (ধর্মনীতি) ওপর অটল থাকবে। অতি বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও নারীদের হত্যা করবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৬১৪)
ধর্মগুরু
ধর্মগুরুরা সমাজের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখেন। বহু ক্ষেত্রে তাঁরা যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে চলেন এবং হত্যা করতে নিষেধ করেন। ফলে আশ্রম ও উপাসনালয়ে অবস্থানকারী ধর্মগুরু ও সাধকদের ইসলাম হত্যা করতে নিষেধ করে। হাদিসে এসেছে, কোনো বাহিনী প্রেরণের আগে মহানবী (স.) তাদের বলতেন, ‘তোমরা আশ্রমের অধিবাসীদের হত্যা করো না।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ২৬৫০)
আশ্রয় দিয়ে হত্যা নয়
যুদ্ধের ময়দানে অনেক সময় প্রতিপক্ষ আত্মসমর্পণ করে এবং অপরপক্ষ তাকে আশ্রয় দানে আশ্বস্ত করে। কাউকে আশ্রয়দানের পর তাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে ইসলাম। রাসুলুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার পর তাকে হত্যা করল সে কেয়ামতের দিন বিশ্বাসঘাতকতার ঝাণ্ডা বয়ে বেড়াবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৬৮৮)
বন্দিকে মানবিক মর্যাদা দিতে বলে ইসলাম। এ ছাড়াও ইসলামে বন্দিদের জন্য অর্থ ব্যয় করাকে মর্যাদাপূর্ণ দান বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে।’ (সুরা দাহর: ৮)
ধ্বংসযজ্ঞ, সম্পদহানি ও প্রাণী হত্যা নয়
ইসলাম রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যুদ্ধের অনুমতি দেয়, তবে যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, সম্পদহানি ও প্রাণী হত্যার অনুমতি দেয় না। মহানবী (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহই তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারী। সুতরাং তোমরা (যুদ্ধক্ষেত্রে) গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করো না, প্রতারণা করো না, কাপুরুষিকতা প্রদর্শন করো না, ভূপৃষ্ঠে বিশৃঙ্খল করো না, বৃক্ষরাজি ডুবিয়ে দিয়ো না বা ভস্ম করো না, পশু হত্যা করো না, ফলদ গাছ ধ্বংস করো না এবং আনুগত্যের অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না।’ (সুনানুল কুবরা লিল-বাইহাকি: ১৭৯০৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নৃশংসতার পথে পা না বাড়ানোর তাওফিক দান করুন। নৃশংসতার হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করুন। আমিন