লক্ষ্মীপুরে টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপটা বাজার ও আশপাশের এলাকাগুলোতে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার। হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। পানির নিচে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষিকাজ।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পূর্ব পাশে একটি খাল রয়েছে। খালের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট কালভার্ট, চুঙ্গা এবং যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সুতারগোপটা বাজার ও মিয়ারবেড়ী এলাকার বেশিরভাগ দোকানঘর খালের ভেতরই গড়ে তোলা হয়েছে। খালে জমেছে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা। ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে আশপাশের এলাকা ডুবে গেছে।
সুতারগোপটা বাজারের অন্তত ৮টি দোকানের দুই-তৃতীয়াংশ খালের মধ্যেই নির্মিত। বাজার থেকে পূর্ব পাশে একটি ব্রিজের দিক তাকালে দেখা যায়, প্রায় ২৫ ফুট চওড়া খালের ১০ ফুটজুড়ে রয়েছে জরাজীর্ণ দোকানঘর। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী কয়েকজন এসব দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। একই খালে চলাচলের জন্য স্থানীয়রা নিজেরাই কয়েকটি সরু কালভার্ট তৈরি করেছে, যা পানি চলাচলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুতারগোপটা গণকবরের সামনে রাস্তায় প্রায় দুই ফুট পানি জমে আছে। আশপাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। জলাবদ্ধতায় ফাইভ স্টার নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে দুটি ঘরে সাময়িকভাবে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
স্থানীয় কৃষক ইসমাইল হোসেন ও নাজমুল হক জানান, ‘আমন ধানের বীজতলা ডুবে গেছে। গত বছর তিনবার বীজতলা করেও চাষাবাদ করা যায়নি জলাবদ্ধতার কারণে। এবারও কোমর থেকে বুক পরিমাণ পানিতে সব জমি ডুবে গেছে। খাল-বিল দখল হওয়ার ফলে বৃষ্টির পানি আর বের হতে পারছে না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জহির আহমেদ জানান, ‘৩৭৫ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে, যা নষ্ট হয়ে যাবে। ১১০০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ২০০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত ডুবে রয়েছে। দ্রুত পানি না সরলে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, ‘সুতারগোপটা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ‘মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকায় এখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেনি। মূলত বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। খাল দখল করে বাড়িঘর যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ, ছোট কালভার্ট এবং বর্জ্যে খাল ভরাট হওয়ায় পানি বের হতে পারছে না।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা এলাকা পরিদর্শন করবো এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানাবো। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলমান রয়েছে। এসব স্থাপনা অপসারণ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে।’