কোরবানি একটি পবিত্র ইবাদত, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হয়। এ ইবাদতের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো কোরবানির পশুটি হতে হবে সুস্থ ও শারীরিক ত্রুটিমুক্ত। ইসলামি শরিয়তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে পশুর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থতা বা ত্রুটি থাকে, তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হয় না। তাই গরু কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
হাদিসে নিষিদ্ধ চার শ্রেণির পশু
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না-
(১) একচোখা যার অন্ধত্ব পরিষ্কার দেখা যায়, (২) যেটি স্পষ্টভাবে অসুস্থ, (৩) যে স্পষ্ট খোঁড়া, (৪) যার হাড়ে মাংস নেই, খুব দুর্বল।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস ২৮০৪)
এই হাদিসের ভিত্তিতে বুঝা যায়, শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, গরুর ভেতরের শারীরিক স্বাস্থ্যও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চোখ ও চেহারার অসুস্থতা
একটি সুস্থ গরুর চোখ হয় উজ্জ্বল ও সজীব। যদি চোখ লালচে, ধূসর, অথবা একপাশে ঝুঁকে থাকে, তাহলে তা অন্ধত্ব বা চোখের রোগের লক্ষণ হতে পারে। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী পুরো অন্ধ বা একচোখা গরু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।
খোঁড়া বা চলাফেরায় অস্বাভাবিকতা
যে গরু স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না, প্রতিনিয়ত ল্যাংচায় বা এক পা টেনে হাঁটে, শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটি কোরবানির অযোগ্য। হাঁটার সময় লক্ষ করুন সব পা সমানভাবে কাজ করছে কি না। হাঁটুর সমস্যা বা হাড়ে ব্যথা থাকলেও গরু খোঁড়া হতে পারে।
শরীরের রোগ বা অতিরিক্ত দুর্বলতা
গরুর শরীরে যদি কোনো ফোলা দাগ, ঘা, বা ত্বকে চুলকানি থাকে, তাহলে তা অসুস্থতার লক্ষণ। বিশেষত ইনজেকশন দিয়ে মোটা করা গরুর পেট অস্বাভাবিক ফুলে থাকে এবং ঘাম বেশি হয়। আবার এমন গরুও কোরবানির অযোগ্য, যার শরীরে মাংস নেই, কেবল হাড় দেখা যায় অতিরিক্ত দুর্বল গরু।
দাঁত ও বয়স অনুযায়ী শারীরিক শক্তি
গরুর বয়স কম হলে বা দাঁত না উঠলে, তার শারীরিক গঠনও দুর্বল হয়ে থাকে। বয়স দুই বছর পূর্ণ না হলে, তা শরিয়ত অনুযায়ী কোরবানির জন্য অনুমোদিত নয়। অতএব দাঁত দেখে বয়স যাচাই এবং সেই অনুযায়ী শক্তি বিশ্লেষণ করতে হবে।
গরুর আচরণ দেখে বুঝুন
একটি অসুস্থ গরু সাধারণত অলস থাকে, খাওয়া কমিয়ে দেয় এবং বারবার বসে পড়ে। খাবার না খাওয়া, জাবর না কাটা, বা এক জায়গায় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গরুর স্বাস্থ্যের বড় সতর্ক সংকেত। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
সুস্থ গরু কেনার পরামর্শ
১. বিশ্বস্ত খামার বা বাজার থেকে গরু কিনুন।
২. প্রয়োজনে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. ইনজেকশন বা কৃত্রিম মোটা করা পশু এড়িয়ে চলুন।
৪. হাদিস অনুযায়ী গরুর বৈশিষ্ট্য যাচাই করুন।
কোরবানির জন্য গরু নির্বাচন একটি ইবাদতের অংশ। তাই শরিয়তের বিধান অনুযায়ী গরু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ফরজের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যে গরু শরিয়তের মান পূরণ করে না, সেই গরু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং শুধু দামে নয়, গরুর স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিন, যেন আপনার কোরবানি হয় সহীহ ও আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।
আপনার মতামত লিখুন :