বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পালিয়ে থাকা, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের আর কোনো পাসপোর্ট নবায়ন বা ইস্যু করা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই সিদ্ধান্ত ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ মে।
সূত্র জানায়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, দেশ-বিদেশে পলাতক এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নবায়ন কিংবা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এরপর গত ২২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের তালিকা জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে পতিত সরকারের যেসব সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেশের আইন ও বিচার এড়িয়ে বিদেশে পলাতক রয়েছেন, তারা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করছেন বা করতে পারেন মর্মে জানা গেছে।
এ ধরনের আবেদনের অনুমোদন প্রচলিত আইন, বিধিমালা এবং ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক ধারার পরিপন্থি। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
চিঠির সঙ্গে ৪ মে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সংবলিত একটি আলাদা অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের নাম এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের নাম সংগ্রহ করে দ্রুত দূতাবাস ও বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠাতে হবে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নবায়ন, নতুন ইস্যু বা যাতায়াত রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিসিদের কাছেও স্থানীয়ভাবে এ ধরনের লোকদের তালিকা থাকে। যাতে কেউ বাদ না পড়ে, সে লক্ষ্যে তাদের কাছেও তালিকা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও উচ্চপদস্থদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। সে সময় তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলমান তদন্ত ও নিরাপত্তা হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু পাসপোর্ট ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :