ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে ‘বড়’ ধরনের রদবদলের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে বদলি নিয়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তপশিল ঘোষণার পর আমরাও সেভাবে জানাব। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব বলেন, বৈঠকে ভোটকেন্দ্র মেরামত নিয়ে কথা হয়েছে। তারা বলেছে ব্যবস্থা নেবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সুষ্ঠু প্যানেল করতে পারব বলে আশা করি। পার্বত্য এলাকায় হেলিপ্যাড নির্মাণ, ভোটের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সরকারি প্রচারযন্ত্রে প্রচার, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা সহজীকরণ, ঋণখেলাপিদের চিহ্নিতকরণ, বিভিন্ন বাহিনীর সাশ্রয়ী বাজেট, আচরণবিধি প্রতিপালনে পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ, পরীক্ষায় যেন প্রভাব না পড়ে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, মেডিকেল টিম গঠন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ১৬ নভেম্বর অ্যাপ উদ্বোধন করব। এআই নিয়ে সচেতনামূলক প্রচারণার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমন বিষয় সামনে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনটিএমসি ব্যবস্থা নেবে। আমাদের এখানেও একটা সেল গঠন করা হবে, যেন ভুল তথ্য না যায়। তিনি বলেন, ভুল তথ্য এবং ভুল প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে যেন বিভ্রান্ত না করা হয়, সঠিক তথ্য প্রবাহটা যেন নিশ্চিত করা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ অন্যান্য যে শৃঙ্খলা, যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটা রেগুলার পদ্ধতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।
আখতার আহমেদ বলেন, আরেকটা প্রশ্ন এসেছিল যে মাঠ পর্যায়ে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়টা নিয়ে। বদলি হবেন এবং মাঠ প্রশাসনের যে সমস্ত বদল হবে, সেটা প্রাথমিকভাবে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজস্ব পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করছে। পরবর্তীতে যখন নির্বাচনের তপশিল হবে, তাদের সেভাবে জানাব।
গতকাল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে শাপলার কলি প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছিল, বিধিমালা না থাকায় শাপলা প্রতীক কোনো দলকে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে হঠাৎ করে শাপলা কলি যুক্ত করা হলো কোন বিধিবিধানের আলোকে? ইলেকশন কমিশন মনে করে কি না, যে একটি দলের (জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি) দাবির প্রেক্ষিতে এই সংশোধনÑ এমন বিষয় উত্থাপন করা হলে ইসি সচিব বলেন, কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে কিছু কিছু মন্তব্য আমরা শুনেছি যে, এটা রাখলেন কেন, এটা না রাখলে ভালো হতো, এটা রাখা কি যৌক্তিক হয়েছে কি নাÑ এরকম। এই বিবেচনায় আগে যে ১১৫টা প্রতীক ছিল, তার থেকে যত দূর মনে পড়ে আমরা ১৬টা প্রতীককে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রতীক নিয়ে ১১৯টা প্রতীক এবার শিডিউলভুক্ত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ইলেকশন কমিশন মনে করেছে যে, শাপলা কলিটা রাখা যেতে পারে। এটা কারোর কোনো দাবির বিষয় প্রাসঙ্গিক না, তার কারণ হচ্ছে আপনারা জানেন যে, এনসিপি তারা শাপলা প্রতীকটা চেয়েছে। শাপলা আর শাপলা কলির ভেতরে পার্থক্য আছে। এটাও আমার মনে হয় ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, কিছু কিছু প্রতীক সম্পর্কে বিরূপ কিছু মতামত আমাদের কানে এসেছে। সে কথাগুলো সেই জিনিসগুলো কমিশন মনে করেছে, এটা সংশোধন করা দরকার বা করা যেতে পারে। সেই বিবেচনায় এটা করেছে। এখন আপনি যদি বিবেচনার প্রেক্ষাপটটা জানতে চান যে, বিবেচনাটা কেন করা হয়েছে, এটা বললাম এখন যেহেতু বিরূপ কিছু সমালোচনা এসেছে, সেই জন্য কিছু বিয়োজন কিছু সংযোজন করে এটা করা হয়েছে।’
শাপলা প্রতীক তালিকায় যোগ না করায় এনসিপি বলেছিল, ইলেকশন কমিশন স্বৈরাচারী আচরণ করছে। শাপলা কলি যোগ করায় আপনারা কি মনে করেন, ইসি স্বৈরাচারী আচরণ থেকে ফিরে এসেছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলের মন্তব্যের ওপরে আমার মতামত দেওয়াটাও উচিত না। এখন আমাকে কে ভালো বলল বা খারাপ বলল, ‘আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্বটা পালন করতে থাকি, সেটাই করা হচ্ছে। আমি বারবার করে একটা জিনিস বলছি যে, কিছু প্রতীক সম্পর্কে কিছু বিরূপ মতামত, মন্তব্য এসেছে। ওভার দ্য পিরিয়ড অব টাইম কোনো একটা পর্যায়ে কমিশন মনে করেছে আচ্ছা ঠিক আছে, এটা সংশোধন করলে করা যেতে পারে। সেই হিসাবে করেছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, করার দরকার মনে করেছে। আজ যেমন করেছে, যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন হয় আবার সংশোধন করবে। এটা তো কোনো স্ট্যাটিক আইন-বিধির কোনো প্রয়োজন হয় না। তর্কবিতর্ক উঠলেই কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানে নতুন করে বিতর্কের যোগ দেখছি না।’
হ্যান্ডশেকের মতো প্রতীক যুক্ত হয়েছেÑ এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘কমিশন যেটা মনে করেছে, নতুন প্রতীক এভাবে দেওয়া যেতে পারে, সেটা দেওয়া হয়েছে। যদি বলেন এটা কেন করা হলো, ওটা কেন করা হলো না, এর জবাব তো মুশকিলের ব্যাপার।’ ওদিকে আটটা দল নভেম্বরে গণভোট চেয়েছেÑ কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি। তারা নভেম্বরে গণভোট চান আমরা শুনেছি। আপনারা জানেন, পরশু দিন বোধহয় পেপারে হেডলাইন ছিল, যেটা সরকার সিদ্ধান্ত দেবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন