কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে গড়াই নদীর উপর নির্মিত সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুতে ১৮ বছর ধরেই চলেছে টোল আদায়। তবে গত এক বছর ধরে বন্ধ ছিল এ কাজ। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নতুন করে ফের টেন্ডার আহ্বান করায় উত্তেজনা বাড়ছে জনমনে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা দাবি তুলেছে- এই সেতুতে যেন আর কখনও টোল আদায় করা না হয়।
২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটির উদ্বোধন করেন। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৫ কোটি টাকা। অথচ গত ১৮ বছরে টোল আদায়ে আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ফলে ব্যয় তুলেও টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা।
সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ সালে টোল আদায় হয়েছিল ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২১ সালে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ২০২১-২০২৪ সালে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা
সবমিলিয়ে আয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গত বছরের ৭ আগস্ট টোলপ্লাজাতে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে আদায়কারীরা স্থান ত্যাগ করেন। এরপর থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। তবে সম্প্রতি আবার ইজারা দিয়ে টোল চালুর উদ্যোগ নেয়ায় এলাকায় শুরু হয়েছে মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু বড় যান নয়, পায়ে চালিত রিকশা, সাইকেল, ভ্যান থেকেও টোল আদায় করা হতো। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এটি ছিল বড় বোঝা। বহুবার আন্দোলনের পর বন্ধ হয় টোল। তবে আবার চালু হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।
বিএনপির প্রয়াত সংসদ সদস্য সৈয়দ মাছ-উদ রুমীর নামে নামকরণ করা হলেও অনেকেই দাবি জানিয়ে আসছেন এই সেতুর নাম সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের নামে করার। স্থানীয়ভাবে সেতুটি কয়া ব্রীজ নামে পরিচিত।
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম বলেন, সরকার রাজনৈতিক চাপমুক্ত থাকায় এখন টোল বন্ধ করা সহজ। ব্যয় তো অনেক আগেই উঠে গেছে।
কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান বলেন, আওয়ামী লুটেরাদের এই ফাঁদ আবার চালু হোক, এটা চাই না।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হব।
বণিক সমিতির সভাপতি কে এম আলম টমে বলেন, সেতুতে টোল আদায় মানে জনগণের দুর্ভোগ। এটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া উচিত।
অটোচালক আকবর হোসেন বলেন, এটা ছিল জুলুম। এই জুলুম আবার যেন না আসে।
বর্তমানে সেতুটি দিয়ে চলাচল করলেও কোনও টোল দিতে হচ্ছে না, যা স্বস্তির। তবে আবার ইজারা প্রক্রিয়া শুরু হলে উত্তেজনা ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সরকার টোল আদায় স্থায়ীভাবে বন্ধ করে এই দুর্ভোগের ইতি টানবে।