বিগত ১৬ বছরের জুলুম, নির্যাতনসহ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় দলটির এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।
দেশে আওয়ামী লীগ ও ভারতপন্থি রাজনীতি বন্ধ এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির নেতারা। তারা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আ.লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে, এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। বিচার ও সংস্কারের জন্যই মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং জুলাই সনদ দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোনো ধরনের যদি কিন্তু ছাড়াই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু একটা কথাই বলব ড. ইউনূস, আপনাকে আমরা আহত এবং শহিদদের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা কোনো অনুরোধ করছি না, সরাসরি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি আওয়ামী লীগকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিগত ১৫ বছরে যে গণহত্যা, গুম, খুন করেছে, সেটা প্রমাণিত। সুতরাং কোনো যদি কিন্তু ছাড়াই এই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম আওয়ামী লীগকে খুনিদের দল মন্তব্য করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পিলখানা, শাপলা চত্বর, জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ খুনিদের দল। খুনিরা রাজনীতি করতে পারবে না। খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই। ৯ মাস আগে শহিদ মিনারের মতো আজও ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিচার না করা এ দেশের মানুষের সঙ্গে তামাশার শামিল। রাজনৈতিক দল হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কি না এমন সিদ্ধান্ত সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো নেবে না। শহিদ পরিবার এই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করা রোগীরা এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে আর আহাজারি করছে, তাদের কেউ এখনো বিচার পায়নি। তবে দলটির মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা আবার নির্বাচনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
তিনি বলেন, আর কত মানুষকে গুম-খুন করলে, কতজন পঙ্গু হলে একটা দলের নিবন্ধন বাতিল হবে? আর কত দমন-পীড়নের পর সেই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে? আমরা হাল ছাড়ছি না। আওয়ামী লীগের বিচার বাংলাদেশেই হতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ ও ভারতপন্থি রাজনীতি চলবে না। ড. ইউনূসকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই এ দেশের জনগণ আপনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এনেছে, তাই আপনি নন, বরং দেশের ছাত্র-জনতা ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিই ঠিক করবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ। গত ৫ আগস্টেই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এখন যারা খুনি আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি এই দুরভিসন্ধি সফল হবে না। এ দেশের রাজপথ এনসিপি, ছাত্র-জনতা ও ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের দখলে থাকবে। আওয়ামী লীগকে যদি রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে সেটা হবে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে। যত দিন এনসিপি আছে, তত দিন এই খুনি চক্রের জন্য কোনো রাজনীতি থাকবে না।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার বলেছেন, ফাঁসির দড়ি ছাড়া হাসিনার দেশে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। যারা মনে করছেন শেখ হাসিনা দ্রুতই দেশে ফিরবে, তাদের জন্য বলতে চাই শেখ হাসিনা শুধু একটি কারণেই বাংলাদেশে ফিরতে পারেন, তা হলো ফাঁসির দড়ি গলায় ঝোলাতে। যাদের হাতে হাজারো সাধারণ মানুষের রক্ত, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ গণহত্যা ও স্বৈরশাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার এখন সময়ের দাবি। মাহিন সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ইলেকট্রনিক বিপ্লব’ বলে আখ্যা দেন।
সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। দলটির নেতাদের মাঠে নামতে দেওয়া হবে না, প্রতিহত করা হবে।
এর আগে জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে জড়ো হন এনসিপির নেতাকর্মীরা। বিকেল ৩টার কিছু আগে ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে মিছিল এসে সমাবেশে যোগ দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :