দর্শকদের তুমুল উন্মাদনার শেষ হলো হারের হতাশা দিয়ে। জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারি ভরা দর্শকদের হতাশ করে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গেল হামজা চৌধুরীর দল।
তবে হারলেও একের পর এক আক্রমণ করে সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছে শমিত-ফাহমিদুল-হামজারা। টানা গোল মিসের মহড়া ও ডিফেন্সের ভুলে ম্যাচে জয়ের বদলে হারের স্বাদ নিতে হলো হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দলকে।
খেলার মাঠে বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয় ভাঙাটা বেশ পুরোনো রীতি। সহজ ম্যাচেও জয়ের দারপ্রান্তে এসে বারবার হোচট খেতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর মাঠে বসে কেউবা এমন পরাজয় মানতে না পেরে কেঁদে দিত গ্যালারিতে বসেই।
কত দর্শক ক্রীড়াপ্রেমীরা পুরোনো মনের কষ্ট আড়ালে রেখে আরেকবার জয়ের আশায় টিকিট কেটে খেলা দেখতে মাঠে হাজির হলো তার হিসেব নেই, হয়ত টিকিট কাউন্টারেও নেই তার সঠিক হিসাব। কিন্তু কিছু সময় পর সেই চিরচেনা বাংলাদেশের পুরোনো অভ্যাসে আরেকবার হতাশ হলো পুরো দেশ। পুরো মাঠভর্তি লাল সবুজের জার্সিধারী বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
একটা সময় ক্রিকেটে ছিল পঞ্চপাণ্ডবের যুগ, আশা বাধঁতো পুরো দেশ! লাল সবুজের পতাকা উঁচু করে সোনার ট্রফি হাতে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ। সেই আশা আশাই রয়ে গেলে ২২ গজের সেই খেলায়। শেষ হয়ে গেলো বাংলার ক্রিকেটের সোনালী সেই পঞ্চপাণ্ডাবের যুগ।
একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলা বলতে দেশের ক্রিকেটকেই পছন্দ করত, দেখতো। দেশের ফুটবল তখন তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। ধীরে ধীরে ক্রিকেট মাঠের সেই জনপ্রিয়তা ফিরে পেলো দেশের ফুটবলের মাঠে।
এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার বাংলাদেশি বংশদ্ভূত হামজার চৌধুরীর লাল সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নামার পর থেকেই। হামজার দেখাদেখি নিজের জন্মভূমিতে ফিরতে শুরু করলো সোমিত সোম, ফাহমিদুলের মত বিদেশি নামীদামী ক্লাবের হয়ে খেলা বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ফুটবলাররা।
নিজ মাতৃভূমিতে তাদের ফেরার পর থেকেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা হয়ে গেলো আকাশচুম্বী। বাংলার দর্শকরা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো ক্রিকেট মাঠের সেই পুরোনো দুঃখ এবার মনেহয় গোছাবে ফুটবলের হাত ধরে।
কিন্তু না! নামটা যখন বাংলাদেশ হোক ক্রিকেট বা ফুটবল, দর্শকের আশা ভেঙে পরাজয় মেনে নিবে খেলার মাঠে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি দর্শকরা কত আশা কত স্বপ্ন নিয়ে কেউ খেলার মাঠে, কেউ টিভির সামনে, কেউবা মোবাইল ফোনের স্কোরে চোখ রেখে দেখতেছে বাংলাদেশ কি করে!
প্রথম দিকে সোমিত সোমের খেলা দেখে আশা বাধছিলো সবাই হয়ত ভুটানের মত করই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে হামজা- সোমিতরা। কিন্তু খেলার ৪৫ মিনিটের মাথায় যোগ করা সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে সিঙ্গাপুরের সং উই ইয়ং ডান পায়ের জোরালো শটে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায়।
যেই মাঠে ছিলো এত হইচই, এত মাতামাতি, এত গর্জন, মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো সব। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামকে পুরো চুপ করিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করলো বাংলাদেশ ফুটবল দল।
প্রথমার্ধের শেষে যখন দ্বিতীয়ার্ধ শুরু আবারও আশা দেখতে শুরু করলো দর্শকরা। একটাই তো মাত্র গোল, শোধ করতেই বা কি এমন! হামজা- সোমিত- ফাহমিদুলরা মাঠে আশা তো দেখতেই পারে। পিছিয়ে থেকেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে হামজরা।
কিন্তু সেই স্বপ্নও বেশি সময় টিকলো না খেলার ৫৮ মিনিটের মাথায় আবার গোল করে লিডের সংখ্যাটা ১ থেকে ২-এ নিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর গোল করার ৯ মিনিট পর গোল করে বসে বাংলাদেশ। রাকিবের গোলে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করে পুরো দেশ। স্কোর তখন ২-১, খেলায় ফিরতে আর একটাই তো মাত্র দরকার গোল।
কিন্তু আশা জাগিয়েও তা আর হলো না। জাতীয় স্টেডিয়ামে হাজারো দর্শককে চুপ করিয়ে দিয়ে ২-১ ব্যবাধানে সিঙ্গাপুরের সাথে পরাজিত হয়ে মাঠ ছাড়ল হামজা- সোমিতরা
আপনার মতামত লিখুন :