টানা ১২ দিনের ভয়াবহ সংঘাতের পর অবশেষে কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও উভয়পক্ষের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার খবর এসেছে। তবে এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে কবে শেষ হবে গাজা যুদ্ধ?
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ শেষ হতে পারে কয়েক মাসের মধ্যে, তবে তা পুরোপুরি শেষ বলা যায় না। দীর্ঘ মেয়াদে নিয়মিত বিনিয়োগ ও স্থিতিশীলতা ছাড়া গাজার পুনর্গঠন হাতে নেওয়ার জন্য দশকের মতো সময় লাগতে পারে।
তিন-পর্যায়ের শান্তিচুক্তি
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর সার্বিক অস্ত্রবিরতি ও বন্দি বিনিময় হয়েছে। ১ম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি, ২য় পর্যায়ে আরো বন্দি মুক্তি ও ইসরায়েলি প্রত্যাহার এবং ৩য় পর্যায়ে গাজার পুনর্গঠন। যা স্বল্প সময়ে মধ্যেই সাফল্য পেয়েছে। তবে মার্চে অস্ত্রবিরতি ভেঙে ইসরায়েল পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে।
অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব
এপ্রিল–মে মাসে দোহা ও কায়রোতে মধ্যস্থতায় ৬০–৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় প্রস্তাব উঠে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম ৪২ দিন যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হয়। ২য় পর্যায়ে যুদ্ধবিরতির স্থায়ী চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হয় ।
বর্তমানে যুদ্ধের অবস্থা
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা চলছে। প্রথম ধাপে কিছু বন্দি মুক্তি ও মানবিক রিলিফ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে গাজায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আবারও সহিংসতা ফিরে এসেছে এবং এটি শান্তির পথে বড় বাধা ।
গাজা যুদ্ধ শেষ হবে কবে?
গাজায় কয়েক মাস পর্যন্ত ধারাবাহিক ‘জীবিত যুদ্ধবিরতি’ অবস্থা চলতে পারে। তবে স্থায়ী শান্তি ও রাজনৈতিক সমাধান পেতে গেলে সময়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও রাজনৈতিক সন্তুষ্টি দরকার।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণের পর থেকে এই সংঘাতের শুরু হয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিশোধ নিতে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। সেখানে মানবিক সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলাকালে ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ৪৬ হাজার ৭৮৮ জনের মৃত্যুর হিসাব পেয়েছেন। হাসপাতাল এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যা তৈরি করেছেন তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৭ই অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ সংঘাতের এক বছরে শনাক্ত হওয়া মৃতদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ ছিল নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
তবে নভেম্বরের জাতিসংঘের বিশ্লেষণে নিহতের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, এক লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন ফিলিস্তিনি এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তেসরা এক প্রতিবেদনে জানায়, আহতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের আঘাত এতোটাই গুরুতর যে তাদের জীবন আর আগের অবস্থায় ফিরবে না।
আপনার মতামত লিখুন :