চলতি বছরে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে হুতি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা। এই হামলাগুলোর নেপথ্যে কি শুধুই ইয়েমেনি হুতিদের নিজস্ব প্রতিশোধপরায়ণতা নাকি রয়েছে বৃহত্তর আঞ্চলিক শক্তি ইরানের কৌশলগত ছায়া?
হুতিদের এই সংঘাতে জড়িত হওয়া শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি স্থানীয় বিবাদ নয়। এটি স্পষ্টত একটি বৃহৎ শক্তির দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব হিসেবে হুতিদের ব্যবহার করা হচ্ছে একটি কৌশলগত উপকরণ হিসেবে।
হুতিদের হামলার ধরন ও লক্ষ্য
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের হুতিরা ড্রোন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি হামলা চালাচ্ছে। এই হামলার লক্ষ্যবস্তু সাধারণত ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা ও বন্দর অঞ্চল, বিশেষ করে রেড সি উপকূলবর্তী এলাকা।
এ ছাড়া তারা আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলেও বাধা দিচ্ছে, যার প্রভাব বিশ্ববাণিজ্যে পড়ছে।
হুতিদের অবস্থান: স্বাধীন নাকি প্রক্সি বাহিনী?
হুতিদের দাবি অনুযায়ী, তারা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এসব হামলা চালাচ্ছে। তারা নিজেদের ‘ইসলামি প্রতিরোধের অংশ’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। যেখানে গাজা উপত্যকার হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হুতিদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, বিশেষ করে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহারে যে পরিসর এবং জটিলতা দেখা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিকভাবে ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের পক্ষে এককভাবে সম্ভব নয়।
অদৃশ্য হাত
ইরান বহুদিন ধরেই হুতিদের রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তাকারী হিসেবে পরিচিত।
বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, হুতিদের ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন ইরানের প্রযুক্তির সঙ্গে মিল রয়েছে। ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে ইরানের ‘শাহেদ’ সিরিজের ড্রোনের মতো নকশা লক্ষ্য করা গেছে।
তারা বলেন, সমন্বিত আক্রমণের সময়সীমা, যেমন গাজায় হামাসের হামলা ও হুতিদের হামলার মধ্যে সময়জ্ঞান, একধরনের সুসমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়। এখানে ইরানকে দেখা যায় একটি ‘অ্যাসিমেট্রিক ওয়ারফেয়ার কৌশল’ বাস্তবায়নে, যেখানে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে প্রক্সি গোষ্ঠী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা হয়।
ভূরাজনৈতিক কৌশল
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, হুতিদের হামলাকে তারা ইরানি হুমকির অংশ হিসেবে দেখে। ফলে ইসরায়েল সরাসরি ইয়েমেনের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও হুতিদের হামলার জবাবে রেড সি অঞ্চলে তাদের নৌবহর ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। একাধিকবার মার্কিন নৌবাহিনী হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝপথে ধ্বংস করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :