‘ইসরায়েলে’র প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। সেনাবাহিনীতে চাকরি বাধ্যতামূলক করার বিতর্ককে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড তোরাহ জুডাইজম (ইউটিজে) নামক একটি ধর্মীয় দল ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সংসদে মাত্র সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টিকে রয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত সরাসরি সরকার পতন ডেকে আনছে না, তবে গাজায় চলমান যুদ্ধের মাঝখানে নেতানিয়াহুর প্রশাসনের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ঘিরে
‘ইসরায়েলে’ সব ইহুদি নাগরিকের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে চাকরি বাধ্যতামূলক। তবে ‘হারেদি’ নামে পরিচিত ইহুদি ধর্মীয় শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর এই বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পেয়ে আসছিল।
তবে গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সেনা ঘাটতি মেটাতে সম্প্রতি একটি নতুন বিল আনা হয়েছে, যেখানে হারেদি শিক্ষার্থীদের জন্যও সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রাখা হয়। এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল ইউটিজে। পরিণতিতে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দলটি জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
জোটে ফাটল, অস্থির নেতানিয়াহু সরকার
এদিকে ‘ইসরায়েলে’র ১২০ আসনের সংসদে নেতানিয়াহুর জোটের মাত্র ৬১টি আসন রয়েছে। ইউটিজের ছয় সংসদ সদস্য পদত্যাগের মাধ্যমে এই সংখ্যা আরও কমে আসবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে যদি দ্বিতীয় একটি অতি-অর্থোডক্স দল শাস-ও জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
ইউটিজে জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে সরকারকে সমঝোতার সুযোগ দিতে। এর মধ্যেই সমাধান না হলে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে। যদিও এই সময়ের পরপরই সংসদ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাচ্ছে, ফলে নেতানিয়াহুর হাতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় থাকছে সংকট মোকাবিলার জন্য।
আদালতের রায় ও রাজনৈতিক চাপ
২০২৩ সালে ‘ইসরায়েলে’র সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, ধর্মীয় ছাত্রদের সামরিক ছাড় বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানবিরোধী। এরপর থেকে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন নিয়ে টানাপোড়েন বাড়ে।
ডানপন্থি জোট শরিকদের একাংশ ‘হারেদি’দের সামরিক ছাড়ের বিরোধিতা করে আসছে। সরকার গঠনের সময়ই ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থন পেতে নেতানিয়াহু ছাড় দিয়েছিলেন, যা এখন তার সরকারে ফাটল ধরিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও আন্তর্জাতিক চাপ
যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক- উভয় দিক থেকেই চাপের মুখে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্ররা ‘ইসরায়েল’কে যুদ্ধ থামাতে বলছে।
অন্যদিকে জোটের অতি-ডানপন্থি দলগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধে রাজি নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, নেতানিয়াহু কৌশল হিসেবে ৬০ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে পারেন, যাতে মিত্রদের সন্তুষ্ট করা যায় এবং একই সঙ্গে জোটে উত্তেজনাও কিছুটা কমে।
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা
দেশটির নিয়ম অনুযায়ী, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসে হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংকট সামলে যদি নেতানিয়াহু নিজেকে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে তিনি এর আগেই আগাম নির্বাচন ডাকার পথে হাঁটতে পারেন।
হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গাইয়েল তালশির বলেন, ‘নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধ এবং ধর্মীয় উত্তেজনার বাইরে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে কাজে লাগাতে চাইতে পারেন, যেমন মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপন।’