ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ, ইলাত বন্দর বন্ধের ঘোষণা ‘ইসরায়েলের’ 

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
ইলাত বন্দর। ছবি- সংগৃহীত

লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ধারাবাহিক হামলার কারণে রাজস্ব আয় মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এবার ইলাত বন্দর বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ‘ইসরায়েল’।

রোববার (২১ জুলাই) থেকে এই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হবে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি সূত্র।

ইসরায়েলি অর্থনীতি ও ব্যবসা বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ক্যালকালিস্ট’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কর না দেওয়ার কারণে ইলাত পৌরসভা বন্দরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। করের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি শেকেলে (৩ মিলিয়ন ডলার)।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুথিদের আক্রমণের প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি বন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইলাত বন্দর।

ইসরায়েলি শিপিং অ্যান্ড পোর্টস অথরিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘চলমান সংঘাত ও আর্থিক সংকটের কারণে ইলাত বন্দর পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার ফলে আগামী রোববার থেকে সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

৮০ শতাংশ রাজস্ব পতন

২০২৩ সালে যেখানে ইলাত বন্দরের আয় ছিল ২১২ মিলিয়ন শেকেলে অর্থাৎ (৬৩ মিলিয়ন ডলার), ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪২ মিলিয়ন অর্থাৎ (১২.৫ মিলিয়ন ডলার)।

এদিকে ধারণা করা হচ্ছে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব পতন হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে গাড়ি আমদানিতে।

২০২৩ সালে যেখানে প্রায় ১.৫ লাখ গাড়ি খালাস করা হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা শূন্যে নেমে এসেছে। চলতি বছর মে পর্যন্ত মাত্র ৬টি জাহাজ সেখানে নোঙর করেছে।

হুথিদের বিজয়, ইসরায়েলের লজ্জা

নেগেভ ও গ্যালিলি উন্নয়ন-সংক্রান্ত কনিস্ট সদস্য ওদেদ ফোরের বলেন, ‘বন্দর বন্ধ করা ‘ইসরায়েল’ সরকারের ব্যর্থতার চিহ্ন। সরকার ইলাতের শিপিং রুট নিরাপদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছিলাম, কিন্তু সরকার কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি।’

এদিকে বন্দরের আর্থিক সংকটের ফলে অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। একসময় যেখানে ১১৩ জন কর্মী ছিল, বর্তমানে সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৭-এ।

বন্দরের এক কর্মকর্তা দ্য ক্যালকালিস্টকে বলেন, ‘তারা আমাদের কুকুরের মুখে ছুড়ে দিয়েছে। এটা শুধু ইলাত নয়, পুরো ইসরায়েলের অর্থনীতির জন্য ক্ষতির প্রতীক।’

হুথিদের হামলার প্রেক্ষাপট

ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী, আনসারুল্লাহ নামেও পরিচিত, গাজার যুদ্ধের প্রতিবাদে ইসরায়েলগামী বা ‘ইসরায়েল’ সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে। এই হামলার ফলে লোহিত সাগর হয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮,০০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু এবং ১,৪০,০০০ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, প্রায় ২১,০০০ শিশু নিখোঁজ রয়েছে।