নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বরে সোমবার জেন-জিদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত ৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সিভিল হাসপাতাল ও ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও পাঁচ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। এর আগে দিনের শুরুতে সিভিল হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সিভিল হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি জানান, বানেশ্বরে ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন দুজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে।
ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারের এক চিকিৎসক জানান, সংঘর্ষে আহত আরও চার বিক্ষোভকারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গুরুতর আহত অন্তত ১০ বিক্ষোভকারী মাথা ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে সংঘর্ষে আহত বহু বিক্ষোভকারীকে সিভিল হাসপাতাল, এভারেস্ট হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার ও অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি চালায়। এতে বহু বিক্ষোভকারী আহত হন।
এর আগে জেনারেশন জেড (জেন-জি) তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন।
এদিকে, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় প্রশাসন রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ করছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত শুক্রবার নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের লাখো ব্যবহারকারী নেপালে রয়েছেন, যারা বিনোদন, সংবাদ ও ব্যবসার জন্য এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল।
এর মধ্যেই সোমবার জাতীয় পতাকা হাতে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সংগীত গেয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এরপরই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দেন।
২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ইউজন রাজভাণ্ডারি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। এছাড়া নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমরা প্রতিবাদ করছি। ২০ বছর বয়সি ইক্ষামা তুমরোক জানান, তিনি সরকারের ‘স্বৈরাচারী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। তিনি যোগ করেন, ‘আমরা পরিবর্তন চাই। অন্যরা এটা সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্ম এর শেষ দেখতে চায়।’
এদিকে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে টিকটকে এমন সব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে সাধারণ নেপালিদের সংগ্রামের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবন ও বিদেশ ভ্রমণের তুলনা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারী ভূমিকা ভারতী বলেন, ‘বিদেশে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, আর তারা (সরকার) ভয় পাচ্ছে যে এখানেও তেমন কিছু হতে পারে।’
গত মাসে নেপালের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নেপালে নিবন্ধন করতে হবে, যোগাযোগের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা ও কমপ্লায়েন্স অফিসার মনোনীত করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর নেওয়া হয়।
রোববার এক বিবৃতিতে নেপাল সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্ল্যাটফর্মগুলো সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
তবে এর আগেও নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা সীমিত করার ইতিহাস রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে অনলাইন প্রতারণা ও অর্থপাচারের উদ্বেগ দেখিয়ে টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্লক করে সরকার। গত বছরের আগস্টে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞার পর টিকটক নেপালের বিধিবিধান মানতে রাজি হওয়ায় পুনরায় চালু করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন