নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে ‘দিল সে’ খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনীষা কৈরালার একটি গভীর ও আবেগপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তার দাদা বিশ্বেশ্বর প্রসাদ (বিপি) কৈরালা ছিলেন নেপালের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাই দেশটিতে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ ঘিরে চুপ থাকতে পারেননি তিনি। আর সেজন্যই দাদা বিপি কৈরালার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘আজ যখন শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি ও স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, তার কথা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে—‘গণতন্ত্র অবিভাজ্য; যদি ঘরে গণতন্ত্র চান, তবে এর জন্য সব সংগ্রামকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।’
তার এই পোস্ট এসেছে এমন সময়ে, যখন দেশজুড়ে তরুণদের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে।
এর আগের দিন মনীষা কৈরালা একটি রক্তমাখা জুতার ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘আজ নেপালের জন্য কালো দিন—যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের কণ্ঠ, তাদের ন্যায়বিচারের দাবি গুলির মাধ্যমে স্তব্ধ করা হলো।’
এদিকে, নেপালে দিনভর সহিংস সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও বহু হতাহতের পর মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘নেপাল সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় অঙ্গীকার করছি। যুব সমাজ ও দেশবাসীকে শান্ত থাকার, সামাজিক সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে পরিস্থিতি আর অবনতির দিকে না যায়।’
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল। ২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই ভিডিওবার্তায় তিনি নাগরিকদের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া সব পক্ষকে সংলাপের পথে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান এই কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জাতির সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই আমি প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং সব পক্ষকে সংলাপের পথে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছি।’
জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে সিগদেল বলেন, ‘শান্তি, নিরাপত্তা এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা সব নেপালি নাগরিকের সম্মিলিত দায়িত্ব। ইতিহাস সাক্ষী, নেপাল সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করলেও দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
নেপাল সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে নিবন্ধিত না হওয়ায় নিষিদ্ধ করেছিল। এই সিদ্ধান্ত তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে, যারা আগে থেকেই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে সরকারবিরোধী ক্ষোভে ফুঁসছিল। এরইমধ্যে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে তিন শতাধিক মানুষ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন