বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার পতনের পর নয় মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েল বারবার বিমান হামলা চালিয়ে দেশটির সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করেছে। আসাদের পতনের পর সিরিয়ার প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ইসরায়েল সিরিয়ার ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও বিমান শক্তি কার্যত ভেঙে দিয়েছে।
তবুও জোলানির নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন তেল আবিবের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পুরোনো শত্রু ইসরায়েল ও সিরিয়া নতুন করে সংঘাতে না গিয়ে বরং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটতে চলেছে। প্রায় আট দশকের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে দামেস্ক ও তেল আবিব যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইসরায়েল আসলে কী অর্জন করতে চাইছে?
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করা। ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে এই প্রক্রিয়া কার্যত স্থগিত হয়ে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ সৌদি আরবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। এখন নেতানিয়াহু দুর্বল ও পরনির্ভরশীল সিরিয়ার সুযোগ নিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের উদ্যোগকে ফের গতিশীল করতে চাইছেন।
পাশাপাশি আঞ্চলিক সমীকরণ নিজেদের অনুকূলে টানতে ও প্রভাব বিস্তার বাড়াতে ইসরায়েল সিরিয়ার বর্তমান সরকারের নতিস্বীকারক অবস্থাকে কাজে লাগাতে চাইছে। একই সঙ্গে ইসরায়েল এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বকে বার্তা দিতে চাইছে যে তারা আর বিচ্ছিন্ন কোনো রাষ্ট্র নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী শক্তি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো, পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েলবিরোধী প্রতিরোধ শক্তির প্রভাব হ্রাস করা। সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরোধ শক্তির অন্যতম প্রধান সহায়ক ছিল। আসাদের পতনের পর সেই সংযোগ দুর্বল হলেও সিরিয়ার জনগণের মধ্যে এখনো প্রতিরোধ শক্তির প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন রয়েছে।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইসরায়েল মূলত ইরান ও হিজবুল্লাহর মতো আঞ্চলিক শক্তির উপস্থিতি সীমিত করতে চাইছে। এভাবে প্রতিরোধ শক্তির ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এ ছাড়া, গোলান মালভূমি ইস্যুতেও ইসরায়েল সিরিয়াকে চাপের মুখে ফেলতে চাইছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ইসরায়েল গোলান মালভূমিকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে এবং বিষয়টিকে ‘অ-আলোচনাযোগ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
সিরিয়ার বর্তমান দুর্বল অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান স্থায়ী করা, সীমান্ত হুমকি হ্রাস করা এবং এমন বাস্তবতা তৈরি করতে চাইছে যাতে সিরিয়াকে বাধ্য হয়ে ইসরায়েলের আধিপত্য মেনে নিতে হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন