কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গঠনমূলক বৈঠক করেছেন। মার্কিন শুল্ক আরোপের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের আশাবাদ দেখা দিয়েছে এই বৈঠকে।
বৈঠকের পর এক্সে লুলা লেখেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক ‘দুর্দান্ত’ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমাধান এগিয়ে নিতে আমাদের আলোচনাকারী দলগুলো অবিলম্বে বৈঠক শুরু করবে।’
রোববারের (২৬ অক্টোবর) এই সাক্ষাৎটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বর্তমানে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অভ্যুত্থানের চেষ্টা করার অভিযোগে তার এই সাজা হয়।
ট্রাম্প গত জুলাইয়ে মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ ঘোষণা করেন, ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অধিকাংশ ব্রাজিলিয়ান পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। সেই সময় তিনি এই পদক্ষেপকে বলসোনারোর বিরুদ্ধে ‘জাদুকরী শিকার’-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
বলসোনারোর সমর্থকরা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্রাসিলিয়ার সরকারি এলাকা দখল করে দাঙ্গা চালায়, যা দুই বছর আগে ওয়াশিংটনে ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার অনুরূপ ছিল। সেই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এদের মধ্যে আছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরেস, যিনি বলসোনারোর বিচারের তত্ত্বাবধান করেছিলেন।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, তিনি লুলার সঙ্গে ‘কিছু চুক্তি’তে পৌঁছানোর আশা করছেন এবং বলসোনারোর মামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন। ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের উভয় দেশের জন্য বেশ কিছু ভালো চুক্তি করা সম্ভব’।
অন্যদিকে লুলা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিকে ‘ভুল’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, গত ১৫ বছরে ব্রাজিলের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৪১০ বিলিয়ন ডলার, যা দুই দেশের সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করেছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা জানান, আলোচনাগুলো অবিলম্বে শুরু হবে এবং ব্রাজিল আলোচনার সময় শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভিয়েরা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ব্রাজিলের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক সংক্রান্ত প্রতিটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা শেষ করতে পারব’।
তিনি আরও জানান, লুলা যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। সম্প্রতি এই অঞ্চলে ওয়াশিংটন তার বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে এবং মাদকচক্রের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানের হুমকি দিয়েছে, যা কারাকাস ‘যুদ্ধের অজুহাত’ বলে নিন্দা করেছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী সচিব মার্সিও রোজা বলেন, ট্রাম্প-লুলা বৈঠকে বলসোনারোর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক গরুর মাংসের বাজারে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দাম বেড়েছে, মেক্সিকোর মতো তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে ত্রিভুজ বাণিজ্য বাড়ছে, আর অন্যদিকে চীনের বাজারে ব্রাজিলের রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন