শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

নীল জগৎ থেকে যেভাবে ইসলামে ফিরলেন এই তারকা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

জাপানের সাবেক পর্ন তারকা রে লিল ব্ল্যাক, যার আসল নাম কাই আসাকুরা। তার জীবনের পথচলা যেন এক গভীর আত্ম-অন্বেষণের প্রতিচ্ছবি, যার জীবনে ছিল প্রচুর অর্থ, জনপ্রিয়তা, বাহ্যিক চাকচিক্য কিন্তু অন্তরে ছিল এক নিঃসীম শূন্যতা। সেই শূন্যতা কখনো ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ভরেনি, কখনোই থামেনি করতালির শব্দে।

২০২৪ সালে এক সফরে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, তখনই ঘটে তার জীবনের মোড় ঘোরানো এক ঘটনা। পুরোনো এক বন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি যান পুত্রজায়ার এক মসজিদে। সেখানেই এক নিবিড় দুপুরে, সাদা পাথরের মেঝে ছুঁয়ে প্রথমবারের মতো তিনি অনুভব করেন সেই শান্তি, যার নাম তিনি আগে কখনো শোনেননি।

কালো হিজাব ও ঢিলেঢালা পোশাকে প্রশান্ত ভঙ্গিতে সাগর পাড়ে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

মসজিদের ভেতরে সুনসান নীরবতার মাঝে প্রার্থনায় নিমগ্ন মুসল্লিদের দেখে রে লিল ব্ল্যাকের অন্তরে যেন এক সজীব আলো জ্বলে ওঠে।

তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্তটা ছিল অদম্য, অথচ অপার শান্তিতে ভরা; এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি আমার।’ সেই এক মুহূর্তেই যেন তার ভেতরে জন্ম নেয় কৌতূহলের এক কোমল বীজ। হৃদয়ের দরজা খুলে যায় এক নতুন জগতের দিকে, যেখানে সবকিছু ভিন্ন, অথচ আশ্চর্যরকম আপন।

আস্তে আস্তে তিনি ইসলামের পথে আরও গভীরভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাহ্যিক জীবন নয়, বরং আধ্যাত্মিক আলোই হয়ে ওঠে তার জীবনের নতুন দিশারি। আর তখন থেকেই রে লিল ব্ল্যাক পরিচিত হন এক নতুন নামে—নূরে ইস্তেকবাল অর্থাৎ ‘ভবিষ্যতের আলো’। বর্তমানে তিনি এ নামেই পরিচিত।

পরিপাটি ও মার্জিত পোশাকে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, অতীত নয়, বরং আত্মিক পরিপূর্ণতাই এখন তার জীবনের মূল লক্ষ্য। এক সময়কার গ্ল্যামার-আবৃত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এখন খুঁজে পেয়েছেন এমন এক প্রশান্তির ছোঁয়া, যা কেবল হৃদয়ের গভীরতাকেই স্পর্শ করে নিঃশব্দে, কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে।

যেভাবে ফিরলেন ইসলামের ছায়াতলে

কুয়ালালামপুরের সেই সফর যেন ছিল কাই আসাকুরার জীবনের এক নতুন ভোরের শুরু। এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ হৃদ্যতা আর গভীর কথোপকথনের মাঝে জন্ম নেয় এক আলোকিত জিজ্ঞাসা—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর কোথায় ফিরব?

পরিপাটি ও মার্জিত পোশাকে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

সেই বন্ধুর অনুপ্রেরণায় তিনি কেবল মসজিদের দেওয়াল ছুঁয়ে দেখেননি, ছুঁয়ে ফেলেছিলেন এক অদেখা জগতের নীরব প্রশান্তি। ২০২৪ সালের ৯ মার্চ, রমজানের পবিত্রতা যখন মালয়েশিয়াজুড়ে বিরাজমান, তখন ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পোশাকে সজ্জিত হয়ে তিনি উপস্থিত হন শ্রী সেন্দায়ানের ঐতিহাসিক মসজিদে ইফতারে অংশ নিতে।

সেদিনের সেই মুহূর্তগুলোর কিছু ছবি ও ভিডিও যখন তিনি শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা যেন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো। উৎসাহ, কৌতূহল আর বিতর্ক সবকিছুরই ঝড় ওঠে।

দুহাত তুলে প্রার্থনায় বোরকা পরিহিত নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

জাপানে ফিরে আসার পর রে লিল ব্ল্যাকের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার তৃষ্ণা আরও গভীর হতে থাকে। পবিত্র আল-কুরআনের অনুবাদে ডুবে থাকা রাতগুলো, ইসলামি চিন্তাবিদদের কথা শোনার ব্যস্ততা এবং অনুশীলনকারী মুসলিমদের সঙ্গে হৃদয়ের স্তরে সংলাপ—সব মিলিয়ে যেন তিনি এক নবজীবনের সন্ধানে নিজেকে নিঃশব্দে গড়ে তুলছিলেন।

আর সেই অন্তরের পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০২৪ সালের অক্টোবরের একদিন। টোকিওর এক ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারে পর্দাসম্মত পোশাক ও হিজাব পরে একটি টিকটক ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ভিডিওটি ছিল নীরব, কিন্তু তা যেন বজ্রের মতো আলোড়ন তোলে। তার অনুসারীরা হতবাক, মিডিয়া তৎপর, কেউ বাহবা দেয়, তো কেউ প্রশ্ন তোলে।

ঐতিহ্যবাহী গম্বুজযুক্ত স্থাপত্যের সামনে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

কিন্তু এইসব প্রতিক্রিয়ার মাঝেও নূরের মুখে এক প্রশান্তি দেখা যায়, ঠিক যেমন কেউ অবশেষে নিজের পথ খুঁজে পায় অনেক দূর হাঁটার পর। কারণ তার কাছে এই পরিবর্তন শুধুই পোশাকের নয়, এটি আত্মার এক নতুন পরিধানে আবৃত হওয়ার গল্প।

এক সাক্ষাৎকারে নূর বলেছিলেন, ‘আমি সেদিন প্রথমবারের মতো হিজাব পরেছিলাম। কারণ আমি মসজিদে যেতে চেয়েছিলাম, মুসলিমদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম।’ জানান, মালয়েশিয়া ভ্রমণের পর তার জীবনে এই পরিবর্তন আসে।

ঐতিহ্যবাহী গম্বুজযুক্ত স্থাপত্যের সামনে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

বর্তমানে নূর ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে নিয়মিত ইসলামিক ভাবনায় ভরপুর কন্টেন্ট তৈরি করছেন। এক ভাইরাল ভিডিওতে তাকে দেখা যায় বোরকা পরা অবস্থায়, নির্লজ্জ আস্থা নিয়ে নিজের যাত্রার কথা বলছেন।

ভিডিওতে তিনি বলেন, কীভাবে কিছু মানুষ তাকে বলেছে তার পাপ কখনোই ক্ষমা হবে না। কিন্তু নূরের কণ্ঠে ছিল এক অনড় শান্তি, তিনি বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণের পর আমি অনুভব করি, আমার অন্তর প্রশান্ত, আমি আল্লাহর আরও কাছাকাছি।’

ঐতিহ্যবাহী গম্বুজযুক্ত স্থাপত্যের সামনে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

রোজা রাখছেন বলেও ভিডিওতে তিনি জানান। সমালোচকদের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতে যাব কি না বা আমার পাপ ক্ষমার যোগ্য কি না, সেটা তোমাদের বিচার করার বিষয় নয়। আমার ও আল্লাহর মধ্যে আমারই নিয়ত যথেষ্ট, এ নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।’

কালো হিজাব ও ঢিলেঢালা পোশাকে প্রশান্ত ভঙ্গিতে সাগর পাড়ে নূরে ইস্তেকবাল। ছবি- সংগৃহীত

২০২৫ সালের গোড়ার দিকে তার ধর্মীয় যাত্রা আরও গভীর রূপ নেয়। তিনি কিয়োটোর বাবা-মায়ের বাড়িতে একটি ছোট প্রার্থনা কক্ষ তৈরি করেন, যেখান থেকে তিনি একটি ভিডিও শেয়ার করেন। সে কক্ষের প্রতিটি কোণে যেন মেলে রয়েছে এক নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি।

নূর কেবল নিজের জন্য নয়, বরং অন্যদের জন্যও আলোর পথ দেখাতে চাচ্ছেন। তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আর শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, বরং পরিশুদ্ধির ও দিশা খোঁজার এক মৃদু আলোয়।

Shera Lather
Link copied!