মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র। জান্তা সেনারা আরাকান আর্মিকে (এএ) তিন দিক থেকে রাখাইন রাজ্যের ভেতরে ঠেলে দিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। একদিকে লড়াই চলছে সীমান্তবর্তী এলাকায়, অন্যদিকে রাখাইনের ভেতরেও কৌশলগত জায়গাগুলোর দখল নিতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ করছে এএ।
থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাবতী’র এক প্রতিবেদন জানায়, এএ দাবি করেছে—জান্তা সেনারা সম্মুখ সমরে টিকতে না পেরে পালিয়েছে। পেছনে ফেলে গেছে নিহত সেনাদের মরদেহ, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম। রাখাইন-মগওয়ে সীমান্তের প্রায় ৯ কিলোমিটার পূর্বে আন-পাদান সড়কের সাম তাত এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে।
রাখাইনের বাইরে বাগো ও আয়েয়ারওয়াদি অঞ্চলেও লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। এই টাউনশিপগুলো রাখাইন সীমান্তের কাছেই অবস্থিত। এএ জানিয়েছে, বাগোর পাদাউন টাউনশিপে জান্তা বাহিনী নিজেদের হারানো ঘাঁটি পুনর্দখল করতে দেড় হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। এর অধিকাংশই বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ পাওয়া নতুন সেনা। প্রতিদিনই এখানে সংঘর্ষ তীব্র হচ্ছে। আয়েয়ারওয়াদির লেমইথনা টাউনশিপেও নতুন করে ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করেছে জান্তা বাহিনী। সেখানেও প্রতিদিনই যুদ্ধ হচ্ছে।
রাখাইনের ভেতরেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এএ কায়াকফিউ শহর দখলের জন্য আক্রমণ বাড়িয়েছে। শহরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে চীনের বড় বড় বিনিয়োগ—একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইনের টার্মিনাল, যা সরাসরি চীনের ইউনান প্রদেশে জ্বালানি সরবরাহ করে। তবে জান্তা সরকারপন্থি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো দাবি করেছে, জান্তা সেনারা বৃহস্পতিবার ( ৪ সেপ্টেম্বর) কায়াকফিউতে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি সাবস্টেশন পুনর্দখল করেছে।
আরাকান আর্মি, উত্তর শান রাজ্যের মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ সদস্য। এই জোট ২০২৩ সালের অক্টোবরে শান রাজ্যে বড় ধরনের আক্রমণ চালায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ১০২৭’। সে অভিযানে তারা উত্তর শান রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা এবং মান্দালয় অঞ্চলের মোগোক দখল করে নেয়।
পরে এএ নিজেদের রাজ্য রাখাইনে অভিযান চালায়। এখন পর্যন্ত তারা ১৭টির মধ্যে ১৪টি টাউনশিপ এবং পাশাপাশি চিন রাজ্যের পালেতওয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মিয়ানমারের চলমান এই লড়াই নতুন করে রাখাইন ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে গভীর সংকটে ফেলেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন