ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১০:১৬ এএম
আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীদের লেখা বই। ছবি- সংগৃহীত

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। একই সঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি বিষয়ের পাঠদানেও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

বিবিসি আফগানের তথ্যমতে, ৬৮০টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তালেবান কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ১৪০টি বই নারীদের লেখা, যার মধ্যে ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’র মতো শিরোনামও রয়েছে। বইগুলোকে ‘শরিয়াহ-বিরোধী’ এবং ‘তালেবান নীতির সঙ্গে অসঙ্গত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও জানানো হয়েছে, তারা ১৮টি বিষয় আর পড়াতে পারবে না।

তালেবান চার বছর আগে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এ ধরনের বিধিনিষেধ ধারাবাহিকভাবে জারি করে আসছে। এ সপ্তাহেই সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০টি প্রদেশে ওয়াইফাই ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের মতে ‘অনৈতিকতা রোধের’ জন্য করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও কিশোরীরা। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকেই তাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নারীদের সম্পর্কিত বিষয়ও নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৮টি বিষয়ের মধ্যে ছয়টি সরাসরি নারীদের নিয়ে, যেমন—জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেন’স সোশিওলজি। তালেবান সরকার বলছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীদের অধিকার সম্মান করে।

সাবেক উপমন্ত্রী ও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা লেখক জাকিয়া আদেলি বলেছেন, ‘তালেবান গত চার বছরে যা করেছে, তাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা তাদের পক্ষ থেকে অপ্রত্যাশিত নয়। যেহেতু তারা নারীদের পড়াশোনার অনুমতি দেয় না, তাই নারীদের চিন্তাভাবনা, মতামত ও রচনাও দমন করছে—এটাই স্বাভাবিক।’

নারীদের লেখা বই ছাড়াও ইরানি লেখক বা প্রকাশকদের বইগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্যের ভাষায়, এটি ‘আফগান পাঠ্যক্রমে ইরানি বিষয়বস্তুর অনুপ্রবেশ রোধের’ জন্য করা হয়েছে।

তালেবানের নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি শিরোনাম রয়েছে, যার মধ্যে ৩১০টি বই হয় ইরানি লেখকদের, নয়তো ইরানে প্রকাশিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা উচ্চশিক্ষায় ‘গুরুতর শূন্যতা’ তৈরি করবে। ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈশ্বিক একাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধন। সেগুলো সরিয়ে ফেললে জ্ঞানের বড় ঘাটতি তৈরি হবে।