চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তানজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাসহ বিশ্বজুড়ে প্রগতিশীল গোষ্ঠী। তারা তালেবান সরকারের শরিয়াহ আইনের নিন্দা করে বলছে, ‘আফগানিস্তানে জোরপূর্বক নাগরিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।’ তবে তালেবান কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, দেশব্যাপী কোনো ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
বুধবার (০১ অক্টোবর) পাকিস্তানি সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া তিন লাইনের এক বিবৃতিতে তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার বলেন, ‘পুরোনো ফাইবার-অপটিক্যাল ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ বিভ্রাট ঘটেছে।’
অভিযোগ ওঠার পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় তালেবান দাবি করেছে, ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার গুজব ভিত্তিহীন। সোমবার শুরু হওয়া বিপর্যয়ের ফলে টেলিফোন পরিষেবাও ভেঙে পড়ে।
পশ্চিমা মিডিয়া ‘ব্লাকআউট’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, দেশব্যাপী চলমান বিঘ্নগুলি ‘ক্ষতিগ্রস্ত ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল অবকাঠামো’ মেরামত করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস জানায়, ৪ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশে ‘সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন’ বা ‘ব্লাকআউট’ হয়েছিল। তবে এর আগেও তালেবান ‘অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াই’য়ের নামে কয়েকটি প্রদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেছে।
১৬ সেপ্টেম্বর বালখ প্রদেশের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছিলেন, ‘অপরাধ প্রতিরোধে’ সেখানে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাদাখশান, তাখর, হেলমান্দ, কান্দাহার ও নাঙ্গারহারেও সম্প্রতি একই ধরনের বিধিনিষেধের খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, আট থেকে নয় হাজার টেলিযোগাযোগ স্তম্ভ ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। এদিকে টোলোনিউজ দাবি করেছে, তালেবান মোবাইল অপারেটরদের এক সপ্তাহের মধ্যে সব থ্রিজি ও ফোরজি পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিমান চলাচল, ব্যাংকিং ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে ইন্টারনেট ‘ব্ল্যাকআউট’। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে পূর্ব আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরপরই এই সংকট দেশটিকে আরও বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকিতে ফেলেছে।