ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ট্রাম্পের সফরের আগে উ. কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম
গত ৯ মে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। ছবি- সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ায় আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের এক সপ্তাহ আগে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। পাঁচ মাসের বিরতির পর বুধবারের (২২ অক্টোবর) এ উৎক্ষেপণ ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে কোরীয় উপদ্বীপে।

এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় উত্তর হোয়াংহে প্রদেশের জুংঘোয়া এলাকা থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে উত্তর-পূর্বমুখী একাধিক স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

জেসিএস বলেছে, মার্কিন পক্ষের সঙ্গে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো হতে পারে সেই একই ধরনের কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলোর পরীক্ষা উত্তর কোরিয়া গত সেপ্টেম্বরে করেছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব সাগরে না পড়ে স্থলভাগের ভেতরেই পড়ে থাকতে পারে।

উত্তর কোরিয়া এর আগে ৮ মে ও ২২ মে যথাক্রমে পূর্ব সাগরের দিকে স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।

জেসিএস জানিয়েছে, ‘আমাদের সেনাবাহিনী অতিরিক্ত উৎক্ষেপণের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে নজরদারি জোরদার করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে তথ্য ভাগ করে দৃঢ় প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বজায় রাখা হচ্ছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ুং দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি উত্তর কোরিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। চলতি বছর এটি পিয়ংইয়ংয়ের পঞ্চম ব্যালিস্টিক উৎক্ষেপণও বটে।

আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এপেক শীর্ষ সম্মেলন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন। তার আগেই উত্তর কোরিয়ার এই উৎক্ষেপণকে বিশ্লেষকরা স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বলে মনে করছেন।

পিয়ংইয়ংয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এমন সময়ে এলো, যখন আন্তর্জাতিক মহলে আশঙ্কা বাড়ছে যে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে আরও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যেতে পারে।

চলতি মাসের শুরুতে বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো নিজেদের নতুন হোয়াসং-২০ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রদর্শন করে দেশটি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।

নতুন আইসিবিএমের প্রকাশের পর থেকেই এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ নিয়ে জল্পনা ছড়ায়। বুধবারের এই উৎক্ষেপণ তাই কেবল সামরিক প্রদর্শনী নয়, বরং সম্ভাব্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকেত হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা ঘিরেও জল্পনা রয়েছে। এমনকি ট্রাম্পের সফরকালে কোরীয় যুদ্ধবিরতি গ্রাম পানমুনজমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষকরা।

তবে বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সিউলকেন্দ্রিক কৌশলগত বার্তাও হতে পারে। স্বল্প পাল্লার হওয়ায় এসব ক্ষেপণাস্ত্র মূলত দক্ষিণ কোরিয়াকেই লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।