তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাতে এক বিশেষ ঐতিহাসিক দলিলের প্রতিলিপি তুলে দিয়েছেন জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স পাদরি থিওফিলোস জিয়ানোপোলোস। ইস্তাম্বুলের দোলমাবাহচে প্রাসাদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) কর্তৃক ৬৩৮ সালে জেরুজালেম দখলের পর খ্রিস্টানদের দেওয়া ‘চুক্তিপত্রের’ ফ্রেমবন্দি অনুলিপি উপহার দেন।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা, জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর নিরাপত্তা এবং মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের সহাবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান, যোগাযোগ পরিচালক বুরহানেত্তিন দুরান এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকিফ চাগাতায় কিলিচ।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর দেওয়া ওই চুক্তিপত্রে খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা ও তাদের উপাসনালয়, বিশেষ করে জেরুজালেমের চার্চ অব দ্য হোলি সেপালকার এবং বেথলেহেমের ন্যাটিভিটি ব্যাসিলিকা সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল।
বৈঠক শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের পদক্ষেপ জেরুজালেমের ঐতিহাসিক মর্যাদা ও পবিত্রতাকে ধ্বংস করছে এবং মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সহাবস্থানের ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।
নেতানিয়াহুকে ‘গণহত্যার নকশাকারী’ আখ্যা দিয়ে তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল এখন মসজিদ ও চার্চ কোনোটিকেই রেহাই দিচ্ছে না।
জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পাদরি জিয়ানোপোলোস সপ্তম শতকে খলিফা উমর (রা.) ও প্যাট্রিয়ার্ক সোফ্রোনিওসের মধ্যে হওয়া সেই ঐতিহাসিক চুক্তির উত্তরাধিকার তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, খ্রিস্টানদের উপাসনালয় ও ঐতিহ্য সুরক্ষা মুসলিম নেতাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব, যা অটোমান আমলে ‘স্ট্যাটাস কো’ নীতি হিসেবে আজও বহাল রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত জুলাইয়ে জিয়ানোপোলোস ও লাতিন প্যাট্রিয়ার্ক পিজ্জাবাল্লা গাজায় গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চার্চ পরিদর্শন করেন এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক চিরাগান প্রাসাদে গাজায় গণহত্যা ও পবিত্র স্থানগুলোর হুমকি নিয়ে আন্তর্জাতিক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপিয়ান মুসলিম ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সম্মেলনে বক্তারা ফিলিস্তিনের সুরক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের ওপর জোর দেন এবং তুরস্কের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন।
সূত্র: আনাদোলু
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন