তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা ইস্যুতে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা বার্তার প্রতিক্রিয়ায় চীন প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে বেইজিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, দালাই লামা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত যেন চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানায়, দালাই লামার জন্মদিন উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছাবার্তা এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর ধর্মশালায় উপস্থিতি চীনের কূটনৈতিক অসন্তোষের কারণ হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের উচিত জিজাং-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সংবেদনশীলতা উপলব্ধি করা এবং দালাই লামার বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানের গুরুত্ব অনুধাবন করা।
চীনের দাবি, তিব্বত চীনের অন্তর্ভুক্ত এবং দালাই লামার উত্তরসূরি বাছাইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র বেইজিংয়েরই আছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, দালাই লামার পুনর্জন্ম সম্পর্কিত যেকোনো সিদ্ধান্ত চীনা আইন, ধর্মীয় রীতি এবং ঐতিহাসিক বিধানের আলোকে নিতে হবে।
বর্তমান দালাই লামা তেনজিন গিয়াৎসো সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় জানান, তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গাহদেন ফোড্রাং ফাউন্ডেশনের অধীনেই হবে। এই বিষয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বাহ্যিক শক্তির হস্তক্ষেপের অধিকার নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এই প্রসঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, দালাই লামা কেবল তিব্বতের নয়, সারা বিশ্বের কোটি ভক্তের আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন তাঁরই অধিকার।
তিনি দালাই লামার জন্মদিন উপলক্ষে ধর্মশালায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা লাল্লান সিং।
চীনের অভিযোগ, দালাই লামা তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাচ্ছেন। তাদের ভাষায়, ধর্মীয় নেতৃত্বের নামে চীনের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
দালাই লামা ১৯৫৯ সালে লাসায় চীনা সেনাবাহিনীর এক অভিযান চলাকালে হাজার হাজার তিব্বতীয় অনুসারী নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মের গেলুগ শাখার প্রধান ধর্মগুরু হিসেবে তাঁকে ‘দালাই লামা’ নামে অভিহিত করা হয়। 'দালাই' শব্দের অর্থ ‘সমুদ্র’ এবং 'লামা' অর্থ ‘গুরু’ অর্থাৎ, এমন একজন শিক্ষক যার জ্ঞান সমুদ্রের মতো গভীর।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক কেবল চীন-তিব্বত নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর অনুসারীরা তাঁকে অহিংসা, সহানুভূতি ও সাংস্কৃতিক টিকে থাকার প্রতীক হিসেবে দেখে থাকেন। ফলে উত্তরসূরি নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বেগ বাড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :