ঢাকা শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ইসরায়েলে ২০ হাজার ভারতীয়, কী করেন তারা?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ১২:২১ পিএম
প্রাণ বাঁচাতে ইসরায়েল ছাড়ছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। ছবি- সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজ দেশে ফিরতে মরিয়া দেশ দুটিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। এদের মধ্যে শুধু ইসরায়েলেই অবস্থান করছে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয়। যারা সেখানে কাজ বা পড়াশোনার জন্য অবস্থান করছে। 

ভারতের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আটকে থাকা ভারতীয়দের ইসরায়েল থেকে স্থল সীমান্ত হয়ে প্রথমে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হবে। তারপর সেখান থেকে বিশেষ বিমানে তাদের দেশে ফেরানো হবে। তেল আবিবের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নজর রাখবেন। যারা ফিরে আসতে চান, তাদের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে নার্স, কেয়ার গিভার এবং অদক্ষ শ্রমিকের জন্য ইসরায়েল কিন্তু ভারতীয়দের ওপরই নির্ভরশীল। ইসরায়েলের প্রবীণ নাগরিকদের একটা বড় অংশই এই কেয়ার গিভারদের ওপর নির্ভর করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১৮,০০০ থেকে ২০,০০০ ভারতীয় কর্মী ইসরায়েলে আছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলেই অনুমান করা হয়। কারণ, ২০২৩ সালে ভারতের সঙ্গে সে দেশের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায়, বহু ভারতীয় কর্মী সেখানে গেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এরমধ্যে ২০২৫ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত, ৬,৬৯৪ জন ভারতীয় কর্মী ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ করেছে। পাশাপাশি ১৯৫টি ইসরায়েলি কোম্পানিতেও ভারতীয় কর্মী নিয়োগ হয়েছে। নির্মাণকর্মীদের মধ্যে বেশির ভাগই নির্মাণ খাতে নিযুক্ত, কাঠামো নির্মাণ, লোহা বাঁকানো এবং প্লাস্টার করার মতো কাজ করেন।

এ ছাড়া,  গত বছর ইসরায়েল নির্মাণকর্মী এবং কেয়ার গিভার মিলিয়ে প্রায় ১৫,০০০ ভারতীয় কর্মী সে দেশে পাঠানোর অনুরোধ জানায় ভারতকে। তাদের মধ্যে কতজন ইসরায়েলে কাজে যোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে জানা যায়নি।

ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ট্রেড অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ড. আসিফ ইকবাল বলেছেন, ভারত থেকে মূলত কেয়ার গিভারের কাজ করেন তারা। মেল নার্স, নার্সিং অ্যাসোসিয়েট হিসাবে ভারতীয়দের চাহিদা রয়েছে। ইসরায়েলে প্রবীণ নাগরিকদের দেখাশোনা করার মানুষের অভাব। তাই ভারত থেকে, বিশেষত দক্ষিণ ভারত থেকে বহু ব্যক্তি কেয়ার গিভারের কাজ করেন। এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় যে সেক্টরে এখন কর্মীর চাহিদা বাড়ছে সেটা হলো, কন্সট্রাকশন। ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ভবন তৈরি, মেরামতের কাজে বহু ভারতীয় কর্মী নিযুক্ত। ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ পুনর্গঠনের জন্যও কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে এই কর্মীদের সংখ্যাটা নার্সের তুলনায় অনেকটাই কম। এ ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক হলেও কর্মী রয়েছেন।

ইসরায়েলকে কর্মক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেওয়ার কী কারণ, জানতে চাইলে ম্যাঙ্গালরের বাসিন্দা পিএন লরেন্স বলেন, এখানে মাইনে অন্যান্য অনেক দেশের চাইতে ভালো। আমি ইসরায়েলে ১৩ বছর কেয়ার গিভারের কাজ করার পর সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এসেছিলাম, কিন্তু ইসরায়েলে ফিরে যাব ঠিক করেছি।

পিএন লরেন্স বলেন, যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেও বলব, ইসরায়েল কাজের জায়গা ভালো। এখানে সরকার বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়, যা অন্য দেশে নেই। এখানে আমরা যা আয় করি, তার ওপর ভারতে থাকা আমাদের পরিবার নির্ভর করে। কোথায় যাব?

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে ৮৫০০০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি বাস করেন। ভারত থেকে ৫০ থেকে ৬০-এর দশকে ইহুদিদের অনেকে ইসরায়েলে যাওয়া শুরু করেন। মূলত মহারাষ্ট্র, তা ছাড়া কেরালা, কলকাতা থেকেও ইহুদিরা সেখানে বসতি স্থাপন শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ে মণিপুর ও মিজোরাম থেকেও সেখানে অভিবাসন দেখা গেছে।

ইসরায়েলস্থিত ইন্ডিয়ান জিউইশ কমিউনিটি সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক ওয়াস্কা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক হামলায় তার পরিচিত কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে । তার মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া তরুণ প্রজন্মও আছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে মেয়েদেরও সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। আমি দুই বছর আগে আমার মেয়াদ শেষ করেছি। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি হয়তো আবার যেতে হতে পারে।