ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

‘আমাদের হাতে বই থাকার কথা, কিন্তু লড়ছি খাবারের জন্যে’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম
১৭ বছর বয়সি আহমেদ। ছবি- বিবিসি

রোববার সকাল। ১৭ বছর বয়সি আহমেদ খাবারের খোঁজে বেরিয়েছে। গাজার খান ইউনিসের বাস্তুচ্যুতদের শিবির আল-মাওয়াসি থেকে সে কয়েক কিলোমিটার দূরের নেটজারিম ক্রসিংয়ে পৌঁছায়। উদ্দেশ্য পরিবারের জন্য কিছু ত্রাণ সংগ্রহ করা।

‘আমরা নেটজারিমে সাহায্য কিনতে এসেছি, কিন্তু কেউ বিক্রি করতে রাজি নয়।’ বিবিসির ফ্রিল্যান্স প্রতিবেদককে বলছিল আহমেদ।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অবরুদ্ধ গাজার শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আহমেদ তাদের মধ্যে একজন, যে স্নাতক পরীক্ষা দিতে পারেনি। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ৬ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী গত কয়েক মাসে কোনো ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেনি।

আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখন বই হাতে থাকার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা খাবারের জন্য লড়ছি।’

খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে ফিরে আহমেদকে পাওয়া গেল একটি ছোট্ট তাঁবুর ভেতর। এখানে সে তার দুই সন্তানসহ আরও ১০ জনের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে সে বলল, ‘একটা বিছানার জায়গা নেই, তবু এখানে আমাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে।’

গতকাল মিশর থেকে ৩০টি ত্রাণবাহী ট্রাক এসেছে শুনে আহমেদের পরিবারে সামান্য আশা জেগেছিল। কিন্তু সেই আশাও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আহমেদ জানায়, ‘ট্রাকগুলো মুহূর্তের মধ্যে দখল করে নিল মরিয়া মানুষ আর সংগঠিত দল। পরে সেই খাবারই চড়া দামে বিক্রি হয়।’

আহমেদ একসময় চেষ্টা করেছিল গাজার তথাকথিত ‘আমেরিকান’ সাইটে ত্রাণ নিতে, যার নিরাপত্তা ও বণ্টনের দায়িত্বে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা ছিল ভয়াবহ। নিচুস্বরে সে বলল, ‘ওখানে যা দেখেছি, বলা যায় না। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, মানুষ ছত্রভঙ্গ হচ্ছে… কেউ কেউ আহত পড়ে আছে।’

আহমেদের গল্প শুধু একটি পরিবারের নয়। এটি পুরো এক প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। যে ছেলেটির হাতে আজ বই থাকার কথা ছিল, সে নেটজারিমে খাবারের জন্য দরাদরি করছে। যে কিশোরের কথা পরীক্ষার হলের ব্যস্ততা নিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সে এখন বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে।

গাজা আজ শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, বরং লাখো আহমেদের গল্প, যেখানে শিক্ষা, শৈশব আর ভবিষ্যৎ ছাপিয়ে একটাই শব্দ শোনা যাচ্ছে— বেঁচে থাকা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি