ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ইসলাম গ্রহণ করলেন গাজাগামী ফ্লোটিলার ক্যাপ্টেন!

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
ইতালীয় ক্যাপ্টেন টমাসো বোর্তোলাজ্জি। ছবি- ভিডিও থেকে নেওয়া

গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ (জিএসএফ) মিশনে অংশ নেওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হন ইতালীয় মানবতাবাদী কর্মী টমাসো বোর্তোলাজ্জি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। টমাসো সুমুদ ফ্লোটিলার ‘মারিয়া ক্রিস্টিন’ জাহাজের ক্যাপ্টেন।

প্রায় ৪৪টি জাহাজ ও পাঁচ শতাধিক কর্মী নিয়ে নৌবহরটি গত ৩০ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। তবে ১ অক্টোবর রাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌবহরটি আটক করে। বোর্তোলাজ্জিসহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়। পরে ৪ অক্টোবর তাদের কয়েকজনকে নির্বাসিত করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

মুক্তি পাওয়ার পর ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বোর্তোলাজ্জি জানান, কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, তার মুসলিম সহযাত্রীদের বিশ্বাস, সাহস এবং মানবিকতা তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, বোর্তোলাজ্জি একটি সাদা-কালো ফিলিস্তিনি কেফিয়া পরেছেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা ও নতুন ধর্ম গ্রহণের অনুভূতি শেয়ার করছেন। তিনি তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু-কে বলেন, ‘আমার ক্রুরা মূলত তুরস্ক থেকে এসেছিল, এবং প্রায় সবাই মুসলিম ছিল। একদিন তারা নামাজ পড়ছিল, তখন ইসরায়েলি পুলিশ ঢুকে তাদের থামাতে চায়। আমি এর প্রতিবাদ করি। পরে আমার এক মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে আমি শাহাদা পাঠ করি।’

আনাদোলুর টিকটক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বোর্তোলাজ্জির ইসলাম গ্রহণের বর্ণনার ঘটনা ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক সহবন্দি তুর্কি মুসলিমকে প্রশ্ন করছেন, ‘আমার শরীরে উল্কি (ট্যাটু) আছে। আল্লাহ কি আমাকে মুসলিম হিসেবে গ্রহণ করবেন?’ উত্তরে সেই ব্যক্তি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। ইসলাম আপনি যেমন, তেমনভাবেই গ্রহণ করে।’

তিনি জানান, বোর্তোলাজ্জি যখন শাহাদা পাঠ করেন, তিনি ছিলেন তার পাশে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘কারাগারের ভ্যানে সে আমার পরের শব্দগুলো উচ্চারণ করে, আর সে মুসলিম হয়ে যায়’। ভিডিওটিতে দেখা যায়, বোর্তোলাজ্জি আবেগঘন হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরছেন।

তার সঙ্গে একই সেলে থাকা আরেক তুর্কি বন্দি জানান, ‘রক্ষীদের চাপ থাকা সত্ত্বেও বোর্তোলাজ্জি ফজরের নামাজের সময় আমাদের সঙ্গে নামাজে অংশ নেন। আমরা জোরে জোরে দোয়া করছিলাম, যেন পুরো কারাগার শুনতে পায়। পুলিশ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে সে তাদের থামিয়ে দেয়।’

বোর্তোলাজ্জি তার ইসলাম গ্রহণের অভিজ্ঞতাকে ‘অন্তরের এক বিশুদ্ধতা ও নতুন করে জন্মলাভের মতো অনুভূতি’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করেছি, আমি যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাই এবং আমার মুসলিম সহবন্দিদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বোর্তোলাজ্জি বলেন, ‘আমরা ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস হারাইনি। ওরা আমাদের আটক করেছিল, কিন্তু আমাদের মানবিকতা থামাতে পারেনি। এই যাত্রা কেবল ফিলিস্তিনের জন্য ছিল না; এটা ছিল মানবতার জন্য। আর এখন আমি সেই মানবতার অংশ হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করেছি।’

এর আগেও এমন একাধিক ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন কর্মী ও টিকটকার মেগান রাইস ২০২৩ সালের নভেম্বরে ফিলিস্তিনিদের ধৈর্য ও কোরআন তেলাওয়াতে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। একই বছর ডিসেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মেডো হাইটস মসজিদে প্রায় ৩০ জন নারী ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা ফিলিস্তিনিদের অবিচল বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই অব্যাহত ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।