ঢাকা শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

‘ভোট এলেই দেয় প্রতিশ্রুতি, ভোটের পর ভুলে যায় সবাই’

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি আসে ‘এইবার হবে ব্রিজ’। ভোট পেতে মানুষের ঘরে ঘরে ছুটে যান জনপ্রতিনিধিরা, দেন উন্নয়নের আশ্বাস। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলেই সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায় টাঙ্গন নদীর স্রোতে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৩ নং আকচা ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের একটি চাওয়া এখনো পূরণ হয়নি- টাঙ্গন নদীর ওপর একটি সেতু।

বাঁশের নড়বড়ে সাঁকোই এখন এই এলাকার মানুষদের একমাত্র ভরসা। স্থানীয়রা নিজেরা অর্থায়ন করে তৈরি করেছেন এই সাঁকো, যেটি দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগীসহ সব শ্রেণির মানুষ। বর্ষায় নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, আর রোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ দুর্ভোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল আকৃতির বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলতে পারে না। সাইকেল-মোটরসাইকেল চলাচল করলেও তিন চাকার কোনো যান পারাপার করতে পারে না। নদীর দুই পারে রয়েছে পাকা সড়ক, কিন্তু মাঝখানের এই নদী পার হতে না পারায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে কয়েকটি গ্রাম।

এই ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনে অসহনীয় কষ্টের মুখে পড়ছেন কৃষকরা। ঝাকুয়াপাড়া, সেনপাড়া, পালপাড়া, বাগপুর, সিংপাড়া, সর্দারপাড়া, চরঙ্গী, দক্ষিণ ও উত্তর বঠিনা গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, তাদের স্বপ্ন শুধু ভোটের মৌসুমেই জেগে ওঠে, তারপর আবার বাস্তবতায় ভেঙে পড়ে।

সচিন্দ্র নাথ রায়, দিলীপ চন্দ্র বর্মন, রিয়াজুল ইসলাম, আশরাফ আলী, আরিফ হোসেনসহ অনেকেই জানিয়েছেন, পালপাড়া ঘাট দিয়েই ১০ গ্রামের মানুষ শহরে যাতায়াত করে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের চলাচল সহজ হবে, তেমনি কৃষিপণ্য সহজেই শহরে সরবরাহ করা যাবে।

বৃদ্ধা কিরণ বালা ও বাচ্চাই রানী বলেন, ‘যুদ্ধের পর থেকেই এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছি। কতো মানুষ যে দুর্ঘটনায় পড়েছে চোখের সামনে দেখেছি। সরকার ছোট হলেও একটা ব্রিজ করে দিলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’

শহিদুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সবাই আসে, বলে ব্রিজ করে দেবে। কিন্তু ভোট পেলেই তারা গায়েব। ব্রিজ তো দূরে থাক, বাঁশ দিয়েও কেউ সহযোগিতা করে না।’

আকচা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রানী বলেন, ‘ব্রিজটি নিয়ে বহুদিন ধরে কথা শুনে আসছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সাঁকোটি পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাশ হলেই পালপাড়া ব্রিজের কাজ শুরু করা যাবে।’

জ্ন্ যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ এলাকায় এসেছেন একাধিক জনপ্রতিনিধি- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনসহ আরও অনেকে। কিন্তু কেউ তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। তাই এখানকার মানুষ এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না।