দীর্ঘদিন ধরেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য নানা প্রকার নির্দেশ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে নানামূখী বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। তবে ট্রাম্পের সেই সব নির্দেশ আটকে গেছে আদালতের বাধায়। এমন পরিস্থিতে অনেকের মনে প্রশ্ন এ আদেশ বাস্তবায়ন হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে তো? নাকি নিজের অস্ত্রেই বধ হবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, ব্যবসা ও মিডিয়া জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টিকারি নাম ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। কিন্তু প্রশ্ন যখন উঠে, ট্রাম্প কোন দেশের নাগরিক? তখন উত্তরটি একদিকে সরল, আবার অন্যদিকে তা হয়ে দাঁড়ায় বিতর্কিত।
ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেডারিক ক্রিস্ট ট্রাম্পও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। কিন্তু তার দাদা ফ্রিডরিখ ট্রাম্প ছিলেন জার্মানির নাগরিক। তিনি ( ফ্রিডরিখ ট্রাম্প) ১৮৮৫ সালে জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করেছিলেন। তবে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর আওতায় তিনি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক।
নাগরিকত্বের রক্ষাকবচ
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, দেশের ভেতরে যেকোনো ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করলে, তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হন। একে বলা হয় জুস সোলি অর্থাৎ মাটির অধিকার ভিত্তিক নাগরিকত্ব। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নীতিরই একজন উপকারভোগী। কিন্তু আইন হলো-তিনি নিজেই এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
ট্রাম্পের নাগরিকত্ব প্রশ্নে বিতর্ক কেন?
ট্রাম্প নিজে জন্মসূত্রে মার্কিন হলেও প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময় (২০১৭–২০২১) তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ নেন। তার যুক্তি ছিল অভিবাসী সন্তানদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ সীমিত করা উচিত। এমন উদ্যোগে বহু আইন বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ, এটি সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত।
যদি ট্রাম্পের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতো?
এই প্রশ্নটি কল্পনাপ্রসূত হলেও গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের মতো একজন জন্মসূত্রে নাগরিকের নাগরিকত্ব আইন করে বা নির্বাহী আদেশে বাতিল করতে চায়, তাহলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হবে, সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে, এমনকি বিপজ্জনক নজির হিসেবে স্থাপন হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য। মূলত, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলযোগ্য নয় এটি সংবিধানিক অধিকার। তবে কোনো অপরাধ বা বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আইন অনুসারে নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে, তবে তা অত্যন্ত জটিল ও বিচারসাপেক্ষ।
ট্রাম্প বনাম ট্রাম্প: নিজ নীতিরই বিপরীত?
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়েই বারবার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ, তিনিই নিজে জন্মসূত্রে নাগরিক এবং তার পরিবারে বেশিরভাগ সদস্যই অভিবাসী পটভূমি থেকে এসেছেন। তার মা মেরি ম্যাকলিওড ট্রাম্প ছিলেন স্কটল্যান্ডের নাগরিক। তার বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প জন্মগ্রহণ করেছেন স্লোভেনিয়ায়। এদিকে, ট্রাম্প পরিবারের পূর্বপুরুষরা ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত। এরপরও ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী নীতি একপ্রকার রাজনৈতিক দ্বিচারিতা হিসেবেই দেখছেন সমালোচকেরা।
আপনার মতামত লিখুন :