বেআইনিভাবে আটক রাখার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা দায়ের করেছেন অধিকারকর্মী মাহমুদ খলিল। প্রায় তিন মাস আটক থাকার পর গত জুন মাসের শেষ দিকে তিনি মুক্তি পান।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দায়ের করা মামলায় খলিল অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে, তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাকে বেআইনিভাবে কারারুদ্ধ করেছে।
মামলায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং পররাষ্ট্র দপ্তরকে বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহমুদ খলিল বলেন, ‘আমি আশা করি, আমার এই মামলা থেকে এটা প্রমাণ হবে যে ট্রাম্প প্রশাসন অধিকারকর্মীদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা মনে করে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে, সে কারণেই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। যদি জবাবদিহি না করা হয়, তাহলে এই নিপীড়ন অব্যাহত থাকবে।’
খলিলের মামলা ফেডারেল টর্ট ক্লেইমস অ্যাক্টের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ মামলায় পরিণত হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, মামলা জিতলে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের নিপীড়নের শিকার অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সহায়তায় ব্যয় করবেন।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং অভিবাসন নীতির সংস্কার ঘটালে সেটাকে তিনি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবেন বলে জানান।
৩০ বছর বয়সি মাহমুদ খলিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ফিলিস্তিনি বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
গত বছর গাজার ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, তখন খলিল তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত হন।
এই আন্দোলনের জেরে চলতি বছরের ৮ মার্চ রাতে তাকে নিউইয়র্কে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ফেরার পথে মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা আটক করেন। তার দাবি, পরে কর্মকর্তারা জানতে পারেন তিনি মার্কিন নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দা, যা শুনে তারা বিস্মিত হন। এরপরও তাকে লুইজিয়ানার জেনা এলাকায় একটি অভিবাসন কারাগারে পাঠানো হয়।
খলিল জানান, তার আটকের বিষয়টি পরিবারের কাছেও গোপন রাখা হয়েছিল। তিনি আলসার রোগে ভুগছিলেন, কিন্তু তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তাকে তীব্র ফ্লুরোসেন্ট আলোয় ঘুমাতে বাধ্য করা হয় এবং দেওয়া হয় ‘প্রায় অখাদ্য’ খাবার। ফলে তিনি ১৫ পাউন্ড ওজন হারান।
১০৪ দিন আটক থাকার পর, ২০ জুন একজন ফেডারেল বিচারক তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র খলিলের মামলাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি, ‘খলিলের ঘৃণামূলক বক্তব্য ও আচরণ ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি ছিল।’
তবে খলিল গ্রেপ্তারের আগে ও পরে বারবার ইহুদি-বিদ্বেষের নিন্দা জানিয়েছেন। তাকে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি। এমনকি হামাস বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও সরকার আনেনি।
আপনার মতামত লিখুন :