বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হার কম হওয়ায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তুলনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হবে। চলতি অর্থবছরে এই খাতের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ কোটি টাকা হলেও ১৪ হাজার কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশ কমিয়ে আগামী বাজেটে ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ বাংলাদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ অকার্যকরভাবে পড়ে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সহায়তা ১৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে আগামী অর্থবছরের বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা আরএডিপিতে করা হয়েছিল ৮৩ হাজার কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সক্ষমতার খুব একটা উন্নতি হয়নি। সেই বিবেচনা করেই এই খাতের বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আগামী বাজেটের আকারও ছোট হচ্ছে। তাই সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মাত্র ৩২,৪১১ কোটি টাকা বৈদেশিক তহবিল ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩২.৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই সময়ে ব্যয় ছিল ৪৪,০৬৬ কোটি টাকা বা ৪৬.৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে চলতি অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে বৈদেশিক সাহায্য কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে, অব্যবহৃত বিদেশি তহবিলের পরিমাণ ছিল ৪২.৮৫ বিলিয়ন ডলার। এমনকি যদি এই অর্থবছরে সম্পূর্ণ বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ব্যবহার করা হয়, তবুও মাত্র ১৬ শতাংশ ব্যবহার করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনের ২০ শতাংশ ব্যবহারের হার সাধারণত সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হয়। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিদেশি তহবিলের সহায়তার ১১ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে পরবর্তী তিন অর্থবছরে ব্যবহার উন্নত হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে ১৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ফলে সহায়তার বিতরণ বিলম্বিত হয়, যার ফলে সময় এবং ব্যয় অতিরিক্ত হয়। এর ফলে, অর্থ প্রদানের ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং দেশীয় ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
ইআরডি প্রতিবেদনে বাস্তবায়ন বিলম্বের একাধিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো প্রায়ই সঠিক পরিকল্পনা বা সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন ছাড়াই তৈরি করা হয় এবং প্রকল্প প্রস্তুতির সাথে জড়িতদের প্রায়ই অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল প্রকল্প নকশার কারণে কাজ শুরু হওয়ার আগেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বা কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব (টিপিপি) সংশোধন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ডিপিপি বা টিপিপির দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রকল্প শুরু করতে বেশি সময় নেয়। কখনো কখনো প্রকল্পগুলোতে সঠিক ধরনের লোক নিয়োগ করা হয় না। এ ছাড়া প্রকল্প কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি, ক্রয়-সম্পর্কিত বাধা এবং জমি অধিগ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলোকেও সময়মতো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিলম্ব কেবল প্রকল্পের খরচই বাড়ায় না বরং ঋণদাতাদের উচ্চ প্রতিশ্রুতি চার্জ প্রদানের দিকে পরিচালিত করে।