বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৩:২৬ এএম

চিনি চোরাচালানে সিলেটে নয়া কৌশল

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৩:২৬ এএম

চিনি চোরাচালানে  সিলেটে নয়া কৌশল

সিলেটের পিছু ছাড়ছে না চিনি-বিতর্ক। চোরাচালানে এবার পালটেছে ধরন। পরিবহনে আনা হয়েছে নয়া কৌশল। এতে কাজ দিয়েছে বেশ। বিভ্রান্ত করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। নতুন কৌশলের কারণে সহজে ও অনেকটা নিরাপদে চোরকারবারিরা পরিবহন করতে পারছে চোরাই চিনি। 
আপাতত দৃষ্টিতে সিলেটে চিনির চোরাচালান কম মনে হচ্ছে। এখন আর আগের মতো বিজিবি-পুলিশি অভিযানে চালান ধরা পড়ছে না। কয়েক মাস আগেও যেখানে চোরাচালানের চিনিভর্তি ট্রাকের সারি লাগত সিলেটের সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর সামনেÑ এখন সেই দৃশ্য উধাও। এসব কারণে চিনি চোরাচালান হ্রাস পেয়েছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে চলছে সমানতালে। অনেকটা আগের মতোই। তবে ধরন ও কৌশল পালটে চোরাকারবারিতে মাঠে নামায় ধরা পড়ছে কম। আগের পুরোনো রুট ছেড়ে করে নতুন রুট দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথে আনা হচ্ছে চিনি। 
এদিকে ৫ আগস্টের পট পরিতবর্তনের পর কিছুদিন আগে পর্যন্তও চোরাচালানে নাম উঠে এসেছিল বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। তবে এবার তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীর নামও।
নতুন ফরম্যাটে চিনি কারবারে অনেকটা অসহায় সিলেটের পুলিশ প্রশাসনও। এ মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী প্রধান দুই দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ চোরাচালানে ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে নাম লেখানোয় অনেকটা বেকায়দায় তারা। এখন আগের মতো বড় চালান এসে নামছে না। পরিবহন হচ্ছে ছোট ছোট চালানে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া যাচ্ছে খুব সহজে। একসময় ট্রাকে-লেগুনায় করে চোরাই চিনি পরিবহন হলেও এখন চোরাকারবারিরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। গভীর রাতে ও ভোরবেলা সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতি মোটরসাইকেলে এক-দুই বস্তা করে এনে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সিলেটে। জালালাবাদ ও এয়ারপোর্ট থানা হয়ে এসব চিনি এসে ঢুকছে শহরে। চোরাই চিনি পরিবহনে নতুন এই কৌশল সম্পর্কে এখনো অবগত নয় পুলিশও। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চিনিসহ সব রকম চোরাচালান রোধে আমরা সতর্ক। পুলিশি চেকপোস্ট আছে শহরের চারদিকে। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে প্রতিনিয়তই কৌশল পরিবর্তন করছে চোরাকারবারিরা। এটি নতুন কৌশল হতে পারে তাদের। এই কৌশল রুখতে আমরা সড়কে চেকপোস্ট বাড়িয়ে দেব।’ 
সূত্র জানায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নীরবে প্রতিদিন শতকোটি টাকার চিনি সিলেট থেকে সারা দেশে পাচার হয়েছে। বিজিবি সক্রিয় থাকলেও চিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে আগের মতো সীমান্ত এলাকার থানা-পুলিশের সখ্য গড়ে উঠে। একসময় কোম্পানীগঞ্জের দয়ারাবাজার, মাঝের গাঁও সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি চিনি আসত। এ রুট ছিল চিনির জন্য বিখ্যাত, এখনো আছে। সঙ্গে ছিল গোয়াইনঘাটে বিছানাকান্দি, মাতুরতল, হাজিপুর, খাসিয়াবস্তি, সোনাটিলা এলাকা। জৈন্তাপুরের আলুবাগান, ডিবিরহাওর, মোকামপুঞ্জি, লালাখাল সীমান্ত চিনির নিরাপদ রুট। এ ছাড়া একসময় কানাইঘাটের দোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ চিনি এসে নামে। চিনি বাণিজ্যের হেডকোয়ার্টার হয়ে উঠেছিল জৈন্তাপুরের হরিপুর। যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় সেই বাজার বন্ধ। এখন একাধিক স্থান থেকে আলাদা আলাদাভাবে সিন্ডিকেট ও চিনি চোরাচালান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভিন্ন কৌশলে এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে গোয়াইনঘাটে বিছানাকান্দি, মাতুরতল, হাজিপুর, খাসিয়াবস্তি, সোনাটিলা এলাকা। পুলিশ পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়েও কাজ হচ্ছে না। পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন আর প্রকাশ্যে চিনি যাচ্ছে না। তারাও স্বীকার করছেন, এ জন্য চোরাকারবারিরা ব্যবহার করছে ভিন্ন পদ্ধতি।

কয়েক দিনে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট সীমান্ত হয়ে চিনির চালান নেমে এখন এসএমপির এয়ারপোর্ট ও জালালাবাদ থানা হয়ে সিলেটে এসে ঢুকছে। শহরতলির ধূপাগোল হয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে দুই রুট ব্যবহার করে শহরে ঢুকে চোরাই চিনি বহনকারী মোটরসাইকেলগুলো। জালালাবাদ থানার বাদাঘাট (নতুন কারাগার) এলাকা এবং ক্যাডেট কলেজের সামনে দিয়ে শহরমুখী সড়ক দিয়ে ঢুকে ছোট ছোট চিনির চালান। এই রুটে চোরাকারবারিরা বিভিন্ন গ্রুপে রাতভর পাহারায় থাকে। একটি গ্রুপ সড়কে টহল টিম বা পুলিশি চেকপোস্ট সক্রিয়া কি না, তা নিশ্চিত হয়ে সিগনাল পৌঁছে দিলে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামে অন্য দল। ভোরের দিকে টহল শিথিল থাকে বলে তারা বেছে নেয় ওই সময়টাকে। তবে দিনের বেলা এবং সন্ধ্যার পরও মোটরসাইকেলে চিনি পরিবহন হতে দেখা যায়।
এসএমপির জালালাবাদ থানার ওসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা আগে এ রুটে এভাবে চিনির চোরাচালানের খবর পাইনি। তবে সবসময়ই আমরা সতর্ক রয়েছি। নতুন যেকোনো কৌশলেই আসুক না কেন, চোরাকারবারিদের ছাড় দেব না আমরা।’ 

সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের সুযোগে সিলেটে চোরাচালান রুটের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছিল স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দলটিকে। নিজেদের নেতাকর্মীদের নাম আলোচনায় আসায় চরম বিব্রত হন জেলা ও মহানগরের নেতারাও। বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে চিনির লাইন। এই অপবাদ সামাল দিতে কেন্দ্রের নির্দেশে হার্ডলাইনে যায় বিএনপি। চোরাচালানে কারো নাম জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। এতে বেশ সুফলও পায় দলটি। তবে গোপনে এবং কৌশলে স্থানীয় পর্যায়ের অনেকে এখনো চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে এবার নাম জড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকার জামায়াত-শিবিরের কর্মীদেরও। তবে এখনো কারো নাম প্রকাশ্যে আসেনি। সূত্র বলছে, মূলত সিন্ডিকেট করে ‘সর্বদলীয়’ভাবে চিনির রুট পরিচালনা করা হচ্ছে। 

অবশ্য নিজেদের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা বলছে, এটি প্রোপাগান্ডা। জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী এসব কাজে জড়িত হতে পারে না। এসব অবৈধ কাজ থেকে দূরে থাকতে কঠোর নির্দেশ আছে দলের সমর্থক, নেতাকর্মীদের প্রতি। গোয়াইনঘাট জামায়াতে ইসলামীর আমির আবুল হোসেন বলেন, বাইরে থেকে অনেকেই বলছেন হয়তো, কিন্তু এখনো পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের কোনো সমর্থক বা কর্মী চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। আর কেউ জামায়াতের নাম নিয়ে চোরাচালানে যুক্ত হলে এর দায় আমরা নেব না। তাদের কোনো দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামী নেবে না। তিনি বলেন, যখন আমাদের এলাকায় চোরাচালানের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে, তখন সব নেতাকর্মীকে ডেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশে সোপর্দ করাসহ আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত সবাইকে জানানো হয়েছে। আমার বিশ্বাস, জামায়াতের কোনো সমর্থকও চিনিসহ অন্য কোনো চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!