বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৯:১৩ এএম

১৬ জুলাই

আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভের বিস্ফোরণ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে

বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৯:১৩ এএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের আবু সাঈদ। ছবি- সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের আবু সাঈদ। ছবি- সংগৃহীত

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় রংপুরে আবু সাঈদসহ সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে রূপান্তর করে গণঅভ্যুত্থানে।

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে। একইসঙ্গে দেশের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন আবারও দেশব্যাপী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পাশাপাশি পুলিশও সেদিন মারমুখী অবস্থানে ছিল। রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই বিকেলের দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্বে ছিলেন আবু সাঈদ। পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আবু সাঈদ দুই হাত মেলে বুক পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ঠিক সেই মুহূর্তে রাস্তার বিপরীত পাশের মাত্র ১৫ মিটার দূর থেকে অন্তত দুই পুলিশ সদস্য শটগান থেকে সরাসরি তার ওপর গুলি চালান।

এরপরই আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হন। তাদের একজন হলেন বলাকা সিনেমা হলের সামনে অস্থায়ী দোকানের হকার মো. শাহজাহান (২৪)। আরেকজন নীলফামারী সদরের বাসিন্দা বাদশা আলী ও সূর্য বানুর ছেলে সাবুজ আলী (২৫)।

এদিন শিক্ষার্থীরা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েন্সল্যাব, প্রগতি সরণি, শান্তিনগর, বাড্ডা, মতিঝিল শাপলা চত্বর, তাঁতীবাজার, উত্তরা ও বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। মহাখালীতে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথক স্থানে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেন। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চরম সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।  ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নগরীর চানখারপুল, পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, প্রগতি সরণি, ভাটারা, মিরপুর-১০ এবং ফার্মগেট এলাকাতেও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।

এছাড়া চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। নিহতরা হলেন— চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের  নেতা ওয়াসিম আকরাম (২৪), ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ (২৪) এবং একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মো. ফারুক (৩২)।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ওই দিনের দেশব্যাপী সহিংসতাকে ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট দমন-পীড়ন’ হিসেবে আখ্যা দেন। আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ১৭ জুলাই দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

১৬ জুলাই রাতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও গাজীপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

এছাড়া, সরকার দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ১৭ জুলাই সকাল থেকে নিজ নিজ ইউনিট অফিসে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলটি ঘোষণা দেয়, তারা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মোকাবিলা করবে।

এদিকে, সরকার এদিনই কোটা বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দাখিল করে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জমা দেওয়া এ আবেদনে বলা হয়, কোটা রাখা বা না রাখার বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এতে আদালতের হস্তক্ষেপ চলতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এদিন দেশের সাধারণ মানুষ ও সব রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছয়জন নিহতের ঘটনায় পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা জানায় পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো— অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এবং সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।

এছাড়া দেশের অন্তত ১১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ১৯৯০ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারাও এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!