নন-লাইফ বিমা উন্নয়নে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা নন-লাইফ বিমা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। যেমন-নির্ধারিত এজেন্ট কমিশনের অতিরিক্ত কমিশন প্রদান এবং বিশ^ বিমা বাজারের সঙ্গে আমাদের বিমার প্রিমিয়াম হার অনেক বেশি। তা ছাড়া নন-লাইফ বিমা খাতে ব্যবসা সংগ্রহ করতে এজেন্ট প্রথা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন, বরং এখানে এজেন্ট বন্ধ করে এবং খরচটি মার্কেটিং এক্সিকিউটিভদের পেছনে ব্যয় করা উচিত।
অন্যদিকে নন-লাইফ বিমা খাতে পণ্যেরও কিছু স্বল্পতা রয়েছে, নন-লাইফ বিমা ক্ষেত্রে বা পরিধি বিস্তারের জন্য বিমাকৃত খাতগুলো চিহ্নিত করে, তা বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন।
বিমা শিল্পের পরিধি বাড়াতে হলে নন-লাইফ বিমা খাতের নিয়ম ও নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করা দরকার, সবাই মিলে যদি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তাহলে বিমা খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সরকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা করপোরেশন শতভাগ সরকারি ব্যবসার আন্ডাররাইট করবে। বর্তমানে ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যবসা বেসরকারি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হয়, এ হার সমানভাবে না দিয়ে পুরোটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দিলে খাতটির আরও উন্নতি হবে।
নন-লাইফ বিমা শিল্পের সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে নন-ট্যারিফ মার্কেট বিবেচনা করা সময়োপযোগী হবে। কারণ, বাংলাদেশে ট্যারিফ মার্কেটে প্রিমিয়ামের হার বিশ^বাজার থেকে অনেক বেশি। ফলে অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া, নন-ট্যারিফ মার্কেটের ফলে আমরা বিশে^র বিমা সেবার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বিমা সেবা প্রদানে সক্ষম হব। এতে নন-লাইফ বিমা খাতে প্রিমিয়াম বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুনঃবিমার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত আইন অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে করতে হবে বাকি ৫০ শতাংশ ওভারসিস মার্কেটে করা যায়। তা হ্রাস করে ৩০ শতাংশ সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে এবং ৭০ শতাংশ ওভারসিস মার্কেটে করার বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে বিকল্প থাকতে পারে যেকোনো কোম্পানি তা সাধারণ বিমা করপোরেশন অথবা বিদেশি পুনঃবিমাকারীদের সঙ্গে পুনঃবিমা করতে পারবে।
যেকোনো নন-লাইফ বিমার নতুন পণ্য যে বিমা কোম্পানি উদ্ভাবন করবে তাকে প্রথমে বাজারজাত করার সুযোগ দিতে হবে এবং যদি সফলতা আসে, তবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে ওই কোম্পানি নতুন উদ্ভাবিত পণ্যের অনুমোদন নেবে। এ জন্য একটি পরীক্ষামূলক সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে যেমন নিয়মনীতির কিছুটা বাধ্যবাধকতা হ্রাস পাবে, তেমনি বিভিন্ন কোম্পানি নতুন পণ্য উদ্ভাবনে উৎসাহ পাবে।
মূলত বিমা দাবি যেকোনো নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সক্ষমতা পরিমাপের জন্য প্রধান মানদ-। তাই বর্তমানে প্রচলিত বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের তথ্যাদি ও নথিপত্র দেওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তা সহজীকরণ একান্ত প্রয়োজন এবং তা সম্ভব।
নন-লাইফ বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম পরিশোধে কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রিমিয়াম পরিশোধে পরবতৃী দিনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকরণের যে বাধ্যতামূলক আইন রয়েছে, তা কিছুটা শিথিল করে ন্যূনতম এক মাস করা প্রয়োজন এবং এক মাসের পর যদি প্রিমিয়াম পরিশোধ না হয়, তবে প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে অথবা বিবেচনাযোগ্য আর্থিক জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।
যদি কোনো কোম্পানি এক মাসের মধ্যে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং স্টেকহোল্ডাররা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে নন-লাইফ বিমা খাতকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করে তোলা সম্ভব। এতে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে ও সঠিক বিমা কভারেজ নিতে আগ্রহ বাড়বে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকার প্রতিফলন ঘটবে।
লেখক: মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি