বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০১:১০ এএম

অধ্যক্ষের পিএস হলেও ওসমানি মেডিকেলের সব কর্তৃত্ব মাহমুদুর রশীদ দিদারের

আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০১:১০ এএম

অধ্যক্ষের পিএস হলেও ওসমানি মেডিকেলের সব কর্তৃত্ব মাহমুদুর রশীদ দিদারের

নাম তার দিদার। এই নামেই তিনি পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে আছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। তার পোস্ট পিএ, কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারী। এই সুবাদে তার সর্বত্র বিচরণ। বলা চলে, ওসমানী মেডিকেলের সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারীও তিনি। একসময় ছোটখাটো নয়ছয় করলেও এখন তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভয় ও দুর্নীতির বরপুত্র হয়ে উঠেছেন। তাকে সমীহ করে চলেন সবাই। প্রতিষ্ঠানে তৈরি করেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রধান তিনি। তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন কলেজের টেন্ডার ও নিয়োগ। বলা চলে, কলেজে নিয়োগ বাণিজ্যে তার জুড়ি মেলা ভার।

দুর্নীতির এ বরপুত্রের পুরো নাম মাহমুদুর রশীদ দিদার। ১৯৯৩ সালে ওসমানী মেডিকেল কলেজে কোষাধ্যক্ষ পদে প্রথম নিয়োগ পান। এরপর ২০১৬ সালে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ও সিলেটে স্বাস্থ্য খাতে ‘দুর্নীতির রাজাখ্যাত’ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী নিয়ম ভেঙে তাকে স্টেনোটাইপিস্ট পদে নিয়োগ দেন। সেই থেকে অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে গত দুই বছর ধরে তিনি কার্যত ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে রয়েছেনÑ যদিও এ পদে সরাসরি নিয়োগই হয়নি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগ তুলছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দিদারের সহকর্মী স্টেনোটাইপিস্ট অনুজ, যিনি নিয়ম অনুযায়ী ওই পদে বসার দাবিদার ছিলেন, তিনি ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি হুমকি ও চাপের মুখে রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বরং তা চলে গেছে হিমঘরে।

কলেজের একাধিক সূত্র জানায়, বার্ষিক কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট ক্রয়, আসবাবপত্র সংগ্রহ, ছাত্রাবাস সংস্কার, লাইব্রেরি নির্মাণসহ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার হয় দিদারের ইশরায়। অভিযোগ রয়েছে, ওসমানি মেডিকেলের এসব কাজে নামমাত্র ঠিকাদার থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সবকিছু তদারকি করেন দিদার নিজেই।

২০২৩ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগে পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও টাকা ছাড়া কেউ নিয়োগ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যার মূলে ছিলেন দিদার। এমনটাই বলেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লাইব্রেরি ভবন নির্মাণেও রয়েছে বড় দুর্নীতির অভিযোগ। ১৪ কোটি টাকার প্রকল্পে লক্ষাধিক টাকা নয়, হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার সুবাদে দিদার প্রতিষ্ঠানের ভেতর নিজ প্রভাবে গড়ে তুলেছেন অনিয়ম-দুর্নীতির নেটওয়ার্ক। যা ওসমানীতে ‘দিদার সিন্ডিকেট’ হিসেবে পরিচিত। কলেজসংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, দিদার তার পদমর্যাদা ছাড়িয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন এবং তার এই ক্ষমতার পেছনে রয়েছে উপরিমহলের লবিং ও প্রভাবশালী যোগাযোগ।

সূত্র জানায়, নামে-বেনামে দিদারের রয়েছে অঢেল সম্পদ। সিলেট মহানগরীর শেখঘাটে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দামের তিনতলা বাড়ি, ঘাষিটুলায় নির্মাণাধীন আরেকটি বাড়ি, ফার্মেসি, স্টেশনারি ব্যবসা, হোটেল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অংশীদারিত্বÑ সবমিলিয়ে দিদারের রয়েছে বেনামি সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য। কলেজের একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেন, এসব সম্পদের উৎস তার সরকারি পদ নয় বরং টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য।

তথ্যানুসন্ধানে উঠে আসে, দিদার বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক, যার অধিকাংশই বেনামি, মূলত আত্মীয়স্বজনদের নামে। কয়েক বছর আগে তিনি মধুশহীদ এলাকার সাদ্দাম নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করেন। কয়েক বছর ব্যবসা করার পর সেটি ডাক্তারদের কাছে বিক্রিও করে দেন। এরপর ২০২৩ সালের দিকে নগরের শেখঘাট এলাকার শুভেচ্ছা আবাসিকে তিনতলা বাড়ি কিনেন, যা দিদারের অর্থে কেনা হলেও নাম রয়েছে তার ভাইয়ের। এই বাড়িতে তিনি পরিবারসহ বসবাস করতেন। মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারে আগে দিদারের এক ভাই পরিবারসহ থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে দিদার নিজেই কোয়ার্টারে অবস্থান করছেন।

শুধু এটিই নয়, সম্প্রতি নগরের ঘাষিটুলা এলাকায় আরও একটি তিনতলা ভবন নির্মাণাধীন, যেটি নিয়েও স্থানীয়দের প্রশ্ন। সেটিও তার নিজের নামে নয়, ভাইদের নামে হচ্ছে। এ ছাড়া দিদার ও সাদ্দাম মিলে মেডিকেল রোড এলাকার রজনীগন্ধা আবাসিক হোটেল পরিচালনা করছেন, যা ঘিরে রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, ওই হোটেলে অসামাজিক কর্মকা- হয়। শেখঘাট এলাকায় ফার্মেসি ব্যবসা, জিন্দাবাজার এলাকায় লাইব্রেরি ও স্টেশনারি ব্যবসায় তার শেয়ার রয়েছে আর ভাতালিয়া এলাকায় রয়েছে বিপুল পরিমান জমি। দিদারের এসব সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ কলেজ সংশ্লিষ্টরা। মেডিকেল কলেজের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দাবি, দিদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় সেসব অভিযোগ কৌশলে গায়েব করে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘মাহমুদুর রশীদ দিদারের দুর্নীতির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি সবারই জানা। সরকারি পদে থেকে তিনি যেভাবে অল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা একাধিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়োগ, টেন্ডার ও কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রমে তার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। তার নামে-বেনামে যে সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তা সঠিকভাবে তদন্ত হলে অনেক কিছু প্রকাশ্যে চলে আসবে।’

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি। তবে দিদারের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না, খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যদিও দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে মাহমুদুর রশীদ দিদার বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই পিএ পদে এসেছি এবং অতিরিক্ত হিসেবে সচিবের দায়িত্ব পালন করছি। শেখঘাট ও ঘাষিটুলার বাড়িগুলো আমাদের ভাইয়েরা বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে কিনেছেন। আমি শুধু দেখাশোনা করি। আমার নিজের কোনো টাকা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডাক্তার, স্টাফ সবাই কোনো না কোনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ডাক্তাররা কলেজে চাকরি করেন, চেম্বার করেন, প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতালের মালিক হয়ে ব্যবসা করছেনÑ এসবে কোনো সমস্যা নেই। আমি করলেই দোষ। আগে তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন।’

এদিকে মাহমুদুর রশীদ দিদারের ভাই পরিচয় দিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খালেদুর রশীদ ঝলক বলেন, ‘মাহমুদুর রশীদ দিদার আমার ভাই, তার বিষয়ে খোজ-খবর কেন নিচ্ছেন? এসব খোজ-খবর নেওয়া বাদ দেন, তা না হলে ঝামেলায় পড়বেন। কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলেন, আমি তা দেখব।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!