বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির মূল চালিকাশক্তি হলো সেচব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকেরা ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের ওপর নির্ভরশীল। উচ্চমূল্যের ডিজেল ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে কৃষিতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে দিন দিন। এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প সমাধান হিসেবে সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্প বা সোলার সেচ পাম্প দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বারখ্যাত ঝিনাইদহ জেলায় প্রচলিত সেচব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্প বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যথাযথ নীতিমালা, সহজ ঋণ সুবিধা এবং কৃষকদের জন্য প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে সৌরচালিত সেচ পাম্প ভবিষ্যতে দেশের কৃষিতে চাহিদার বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম হবে। সোলার সেচ পাম্প শুধু উৎপাদন খরচ কমায় না, বরং পরিবেশ সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে কৃষির আধুনিকায়ন এবং জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এ প্রযুক্তি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশে গত ২ বছরে ব্যক্তি উদ্যোগে ১ হাজারের বেশি সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্প স্থাপিত হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কংশী গ্রামের কৃষক লাল্টু মিয়া বলেন, বিগত কয়েক বছরে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেল চালিত সেচ পাম্পের বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্প ব্যবহার শুরু করেছি। এতে উৎপাদন খরচ কমে এসেছে।
শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ডিজেলচালিত সেচ পাম্প ব্যবহারের ফলে ফসল উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়ছিল। সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্প বসিয়েছি। এতে সেচের জন্য বাড়তি কোনো খরচ নেই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোলার প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল ইসলাম নাঈম বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সোলার সেচ পাম্প নিয়ে কাজ করছি। এর ব্যবহার সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে’। তিনি আরও জানান, অনেক কৃষক অনভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিম্নমানের সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করায় কিছুদিন পরই এগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। এতে কৃষকদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে কৃষিতে উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি এটি পরিবেশবান্ধব। বিএডিসি সৌরচালিত সেচ পাম্প নিয়ে কাজ করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন