টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৭০০০ রান সংগ্রহ করার পাশাপাশি ৫০০ উইকেট শিকারের অনন্য নজির স্থাপন করলেন এই অলরাউন্ডার। গত রোববার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকন্সের হয়ে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে খেলতে নেমেই এই রেকর্ড গড়েন সাকিব। ম্যাচের ১৫তম ওভারে পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানকে আউট করেন তিনি।
ওই এক উইকেট শিকার করেই টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের পঞ্চম বোলার ৫০০-এর ঘরে পৌঁছে যান বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার। পরের ওভারে কাইল মেয়ার্স ও নাভিন বিদাইসির উইকেটও নেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত ১১ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। ফলে সাকিবের নামের পাশে উইকেটসংখ্যা দাঁড়ায় ৫০২। এর আগে চারজন বোলার (রশিদ খান ৬৬০, ডোয়াইন ব্রাভো ৬৩১, সুনিল নারাইন ৫৯০ ও ইমরান তাহির ৫৫৪) ছুঁয়েছেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলক। কিন্তু ব্যাট হাতে তাদের কেউই ৭০০০ রান স্পর্শ করতে পারেননি। শুধু সাকিবই এখন এই বিরল ক্লাবের একমাত্র সদস্য, যেখানে ৭৫৭৪ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ৫০২ উইকেট। ডোয়াইন ব্রাভো সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন, তবে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৬৩১ উইকেট ও ৬৯৭০ রান নিয়ে।
আন্দ্রে রাসেলও কাছাকাছি, তার সংগ্রহ এখন ৯৩৬১ রান ও ৪৮৭ উইকেট। সাকিবের বোলিং দাপটে ১৩৩ রানে থামে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস। সহজ টার্গেট ১৯.৪ ওভারেই ৭ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যায় অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা। ব্যাট হাতেও ছিলেন কার্যকর। চার নম্বরে নেমে ১৮ বলে ২৫ রান করেন তিনি, যাতে ছিল দুটি ছক্কা ও একটি চার। আউট হওয়ার আগেই দলের জয় অনেকটা নিশ্চিত করে দেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে সাকিবের হাতে। ইতিহাস গড়ে সাকিব বলেন, ‘এই অর্জনের পেছনে অনেক কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরে আমি খুব খুশি।
অনেক লম্বা ক্যারিয়ার...। যা অর্জন করতে পেরেছি, আমি খুশি।’ আগের ম্যাচগুলোতে সেভাবে বোলিং পাননি। সাকিব বলেন, ‘গত কয়েক ম্যাচে আমি বেশি বোলিং করতে পারিনি। তাই কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। পাশাপাশি খুব বেশি ওভার বোলিং না পাওয়ায় কিছুটা নেতিবাচকতাও কাজ করছিল। কারণ, সাধারণত আমি আরও বেশি বোলিং করি। তবে এটা পুরোটা দলের জন্য। যখনই আমার সুযোগ আসবে, অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের জন্য অবদান রাখার সময় অবশ্যই দারুণ অনুভূতি হয়, বিশেষ করে যখন আপনি দলকে জিততে সাহায্য করেন। এটি আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেয়, তাই আশা করি, আমি এটি ধরে রাখতে পারব।
টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় আসছে। ক্রিকেট প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। দশ বছর আগের তুলনায় এটি অনেক দ্রুতগতিতে চলছে, তাই উন্নতি এবং তেমন মানসিকতা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৪৪তম ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেলেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলকে ছুঁয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের চেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরা হয়েছেন কেবল চারজন। এদিকে সাকিবের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আছে তার পরিবারের সদস্যরাও। তার মতে, পরিবার কাছে থাকলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। সাকিব বলেন, ‘পরিবার সব সময়ই আমার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেত। তবে তিন সন্তান নিয়ে... তাদের স্কুলের কারণে কঠিন হয়ে গেছে। তাদের এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। তাই এখানে এসে থাকতে পারছে। তো এটি ভালো ব্যাপার। যখন বয়স বাড়তে থাকে, তখন পরিবার পাশে থাকলে অনেক স্বস্তি কাজ করে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন