জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি) চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত, প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন, অহেতুক হয়রানি করার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারণ এটা নিয়ে কাজ চলছে, আগামী বছর থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে যাব।’
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘কর ও ভ্যাট সংস্কারবিষয়ক এক সংলাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘ডেটা না থাকায় র্যানডম পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে যাব। ডেটা সংগ্রহ নিয়ে একটি বড় সমস্যা আছে। আমাদের অনেক বেশি ঋণ হয়েছে, এই টাকায় ঋণ পরিশোধ করা চ্যালেঞ্জ। এজন্য আমাদের ট্যাক্স জিডিপি বাড়াতে হবে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এ দেশে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ১২ শতাংশের বেশি। আর আমাদেরটা আরও নেমে ৬.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা উদ্বেগজনক। তবুও কোনোভাবেই ট্যাক্স জিডিপি বাড়াতে পারছি না।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা একটি একক ভ্যাট হার নির্ধারণ করতে চাই। কিন্তু এতে ব্যবসায়ীরাই বাধা হয়ে দাঁড়ান। এখন ভ্যাট দিতে কারো কাছে যেতে হয় না। এক ক্লিকেই নিজের সিস্টেম থেকে ভ্যাট দেওয়া যায়।’
কর ছাড় নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আমরা কর ছাড় দিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। কিন্তু দেখা যায়, আট বছরের জন্য কর ছাড়ের কথা হলেও ৪০ বছর পর্যন্ত সেই ছাড় চলতে থাকে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা আছে, যেটা স্বীকার করে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।’
তার মতে, বিদেশি ঋণের বোঝা অনেক বেড়েছে। নিজস্ব রাজস্ব বাড়াতে না পারলে এসব ঋণ পরিশোধ করাও বিপজ্জনক হয়ে যাবে। রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, নীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতেই ৯০ শতাংশ সময় চলে যায়। তাহলে রাজস্ব আদায়ের সময় দেবে কীভাবে? তাই রাজস্ব খাত দুটি বিভাগে আলাদা করছি। একজনের জায়গায় দুজন কাজ করলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আশির দশকে করপোরেট ট্যাক্স ছিল ৫০ শতাংশ। সেটা কমাতে কমাতে এখন ২০ পার্সেন্ট করা হয়েছে। আসলে আমাদের যে পরিমাণ রেভিনিউ দরকার, তা আনতে আমাদের সুযোগ আছেÑ সেটা ব্যবহার না করলে আমরা এগুতে পারব না।’
ন্যূনতম করহারের বিধানকে কালাকানুন আখ্যা দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভবিষ্যতে এসব উঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন করতে গেলে রাজস্ব আদায় অনেক কমে যাবে। তাই এসব ন্যূনতম কর শৃঙ্খলায় এলে এখানে হাত দেওয়া যাবে।’
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআর সংগ্রহ করেছে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। সরকার রাজস্ব আদায়ে জোর দিলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৬ শতাংশে। এর আগের অর্থবছরে এই অনুপাত ছিল ৭.৪ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে এনবিআরে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অটোমেশন পদ্ধতি না থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সবার। অটোমেশন পদ্ধতি শুরু হলেই ৪০ শতাংশ অব্যবস্থাপনা কমে যাবে। পলিসি ক্রিয়েট না থাকলে সমস্যার। আগামীতে কী কী করব তা এখনই জানানো উচিত। তবেই আমাদের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব।’ সিপিডির আয়োজনে সংলাপে ব্যবসায়ী নেতা, বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন