যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্কের চাপ বাড়তে পারে, তবে ভারত তা সহ্য করবেÑ এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্ক। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারতীয় রপ্তানি খাতে এটি বড় প্রভাব ফেলবে। মোদি সোমবার আহমেদাবাদে এক অনুষ্ঠানে বলেন, কৃষক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পশুপালকদের স্বার্থই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যত চাপই আসুক, ভারত তা মোকাবিলা করবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর এই শুল্ক দ্বিগুণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক। বর্তমানে ভারতের এক-তৃতীয়াংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে। সরবরাহকারী বদলাতে হলে দাম বাড়বে, না বদলালে রপ্তানি খাত সংকটে পড়বে। ভারত ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে। মোদি দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত শুধু ভারতীয় পণ্য কেনা।’
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেসব দেশ আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স ও সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন আরোপ করবে, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘বড় ধরনের নতুন শুল্ক’ আরোপ করবে এবং আমেরিকার চিপ রপ্তানি সীমিত করবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন যেন তারা এই ধরনের কর বাতিল করে। সাধারণত এই করগুলো প্রযোজ্য হয় বড় ও প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর, যেমনÑ অ্যালফাবেট, মেটা, অ্যামাজন।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি সেসব দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াব, যারা অবিশ্বাস্যভাবে আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে আক্রমণ করছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল ট্যাক্স, ডিজিটাল সার্ভিস আইন এবং ডিজিটাল মার্কেটস রেগুলেশনÑ সবই তৈরি হয়েছে আমেরিকান প্রযুক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। অথচ চীনের বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এটা শেষ হওয়া উচিতÑ এখনই! ট্রাম্প আরও বলেন, আমেরিকা তার অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রযুক্তি ও চিপের রপ্তানিতে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যেসব দেশ ডিজিটাল ট্যাক্স, আইন, বিধি বা নিয়ম চালু রাখবে, তারা জেনে রাখুকÑ যদি এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপগুলো সরানো না হয়, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাদের রপ্তানির ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করব। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, আমেরিকা এবং আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আর বিশ্বের মানি ব্যাংক বা পাপোশ নয়। আমেরিকা ও আমাদের অসাধারণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতি সম্মান দেখান অথবা পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকুন!
এই হুঁশিয়ারি এমন সময় এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে একমত হয়েছে যে, তারা একসঙ্গে অন্যায্য বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়বে এবং ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশনের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশও নিশ্চিত করেছে যে তারা নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফি আরোপ করবে না। ডিজিটাল কর এখন ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান বাণিজ্য আলোচনার একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাও এই কর ইস্যুর কারণে বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনায় শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে বিগত কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতের দূতাবাস একটি লবিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এর অতীত রেকর্ডে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়া বিদেশি সংস্থাগুলোর পক্ষেও প্রতিষ্ঠানটি তদবির করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, দূতাবাস প্রতি মাসে ৭৫ হাজার ডলার দেবে মার্কারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এলএলসিকে নামের লবিং প্রতিষ্ঠানটিকে। প্রতিষ্ঠানটি সরকার-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম, গণমাধ্যম পরিচালনা ও অন্যান্য সেবা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৮ আগস্টের এক নথি সূত্রে এই তথ্য পাওয়া যায়।
হোয়াইট হাউসের বর্তমান চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস একসময় মার্কারির সহ-সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ফার্মটির অংশীদার ব্রায়ান লানজা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভিন্ন আরেকটি নথিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মার্কারির কাছ থেকেও এ বিষয়ে কোনো উত্তর পায়নি ব্লুমবার্গ। দেশের ১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে যেখানে ‘সবচেয়ে ভালো চুক্তি’ পাওয়া যাবে, ভারত সেখান থেকেই তেল কেনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার। বিনয় কুমার এমন একসময়ে এ বক্তব্য দিলেন, যখন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য শাস্তিস্বরূপ আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্কও (২৫ শতাংশ) রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন