বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

কোন পথে ডাকসু নির্বাচন

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভবন। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভবন। ছবি- সংগৃহীত

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন, যেখানে ২৮টি পদে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে ৬২ জন ছাত্রী। এবারের নির্বাচনে মোট ৫টি প্যানেলে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, কমনরুম, আন্তর্জাতিক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, গবেষণা-প্রকাশনা, ক্রীড়া, ছাত্র পরিবহন, সমাজসেবা, স্বাস্থ্য-পরিবেশ, মানবাধিকার-আইন বিষয়ক ও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টসহ অন্যান্য সম্পাদক পদেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন।

ছাত্রী প্রার্থীর সংখ্যা ও অবস্থান

৪৭১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬২ জন ছাত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে ১ জন ও এজিএস পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিভিন্ন সম্পাদক পদেও ছাত্রী প্রার্থীদের ভালো অংশগ্রহণ দেখা গেছে, যেমন কমনরুম-রিডিংরুম-ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৩ জন এবং সদস্য পদে ২৫ জন ছাত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থিতার বাছাই ও চূড়ান্ত তালিকা

চূড়ান্ত ফলাফলের আগেই ২৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়া প্রাথমিক বাছাইতে বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর ফলে চূড়ান্তভাবে ৪৭১ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ও প্রক্টরিয়াল টিম প্রথম স্তরে, পুলিশ দ্বিতীয় স্তরে এবং সাতটি প্রবেশমুখে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে সেনাবাহিনী তৃতীয় স্তরে দায়িত্ব পালন করবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভায়।

ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা

নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এবং ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ঘিরে রাখবে। ভোট গণনার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

হল ও ক্যাম্পাস প্রবেশ বিধিনিষেধ

নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে আবাসিক হলে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবেন না। নিয়মিত টহল কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন মেট্রোরেল বন্ধ থাকবে। বৈধ শিক্ষার্থী, অনুমোদিত সাংবাদিক ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।

জরুরি নির্দেশনা

ডাকসু নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য শুধু সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করা যাবে। পিভিসি, কাপড় বা অন্য কোনো মাধ্যমে ব্যানার, ফেস্টুন বা বোর্ড টাঙানো নিষিদ্ধ। যারা এরই মধ্যে এসব ব্যবহার করছেন, তাদের তা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য টাস্কফোর্স থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার

অন্যদিকে, রুমমেটকে মারধরের অভিযোগে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী জালাল আহমদ জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং তার ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে এবং জালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা যায়, রাতে ঘুমানোর সময় জালাল কক্ষে এসে লাইট জ্বালিয়ে উচ্চস্বরে শব্দ করতে থাকেন। ঘুম ভেঙে গেলে  রুমমেট রবিউল বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জালাল তাকে ‘অবৈধ’ ও ‘বহিরাগত’ বলে গালিগালাজ শুরু করেন এবং প্রতিবাদ করলে টিউবলাইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। হামলায় তার বুকে গভীর ক্ষত হয়। সহপাঠীরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ

এবারের হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলের জন্য ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ৭৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

হলে হলে প্রার্থী সংখ্যা

চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৫৯ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৩১ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬২ জন, জগন্নাথ হলে ৫৫ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৫৮ জন এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন।

এছাড়া রোকেয়া হলে ৪৫ জন, সূর্যসেন হলে ৭৫ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৬০ জন, শামসুন নাহার হলে ৩৫ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ৬৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৭৩ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৫৯ জন এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৬ জন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, অমর একুশে হলে ৭৬ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩৮ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৬৮ জন এবং স্যার এ এফ রহমান হলে ৬২ জন প্রার্থী রয়েছেন।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার

এবারের নির্বাচনে ৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এর মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল থেকে ১১ জন, বিজয় একাত্তর ও শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে ৯ জন করে, ফজলুল হক মুসলিম, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, অমর একুশে, হাজী মুহম্মদ মুহসীন এবং স্যার এ এফ রহমান হল থেকে ৫ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

এ ছাড়া সূর্যসেন ও জগন্নাথ হল থেকে ৪ জন করে, কবি সুফিয়া কামাল ও শামসুন নাহার হল থেকে যথাক্রমে ২ ও ১ জন এবং কবি জসীম উদ্দীন হল থেকে ১ জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

প্রচারণায় জমজমাট ক্যাম্পাস

নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রচারণা শুরু করেছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। বামপন্থি সাতটি ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের প্রার্থীরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে প্রচার শুরু করেন।

এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) ও জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসুর নেতৃত্বে তারা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, টিএসসি এবং কলা অনুষদ এলাকায় জনসংযোগ করেন। পরে মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী অনিয়মের আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

ছাত্রদলের প্রচারণা

ছাত্রদল- সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা ‘স্মৃতি চিরন্তন’-এ শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রচারণা শুরু করেন। এ প্যানেলের স্লোগান ছিল ‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জানান, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রচার

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্যানেল ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্রচার শুরু করে কবি জসীম উদ্দীন হল থেকে। ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের ও জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, তারা শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের ইশতেহার তুলে ধরছেন।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রচার

উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রচার শুরু করে। তার সঙ্গে ছিলেন জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ও অন্যান্য প্রার্থীরা।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের লক্ষ্য

ইসলামি ছাত্রশিবির- সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে প্রচার শুরু করে। তাদের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনৈতিক নয়, বরং একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠুক।’

অন্যান্য প্যানেলের কার্যক্রম

এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদ- সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন- সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ এবং মাহিন সরকারের উদ্যোগে গঠিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের প্রার্থীরাও প্রচারে সক্রিয় রয়েছেন।

Link copied!