আমরা কোনোদিন পলাশির প্রান্তরে যাইনি, কোনো যুদ্ধে সশস্ত্র ঝাঁপিয়ে পরিনি। আমরা কেবল পরাধীনতার শেকলে থেকে ভেবেছি কবে আমাদের দেশে একজন মহান রাজপুত্রের আবির্ভাব হবে? কবে আমাদের জন্য সে রাজপুত্র ন্যায্যতা স্থাপন করে সাম্য-মানবিকতার দেশ গড়বে। কবে আমাদের সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, এটা শুধু আজ পর্যন্ত ভেবে এসেছি। কিন্তু আমরা কি কখনো প্রস্তুত ছিলাম সত্য স্থাপনের জন্য আমাদের দেশে একজন আলোকবর্তিকাস্বরূপ ইতিহাসের মহানায়ক আসুক? আমরা কি একজন সু-পুত্র জন্মানোর জন্য আমাদের দেশের পুণ্যভূমিকে পরিচর্যা করে এসেছি? মূলত আমরা নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনের মধ্যদিয়ে নিজেদের কালো মুখোশের পরিচয় দিয়েছি। কথিত আছে যে, ‘সিরাজুদ্দৌলাকে ব্রিটিশ সেনারা গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় যতজন বাঙালি চেয়ে চেয়ে দেখেছেন, প্রত্যেকে যদি একটি করে ঢিল ছুড়ত তাহলে ব্রিটিশরা সেদিন নবাবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো।’
অতএব, সেদিন আমাদের ব্যর্থতাই একশ বছর গোলামির পথ অঙ্কন করেছে। সেদিন যদি বীর বাঙালির বীর পুরুষ সন্তানেরা নবাবকে আটকের জন্য ব্রিটিশদের বাধা প্রদান করত যদি বাঙালির সূর্য সন্তানেরা নিজেদের নবাবকে রক্ষার জন্য ব্রিটিশদের সঙ্গে সাময়িক সংঘাত কিংবা যুদ্ধ করত তাহলে একশ বছর দাসত্বের শিকল পরা লাগত না।
সেদিনের সেই বাঙালিদের পরে আমরাই এখনোও বাঙালি পরিচয়ে নিজের অস্তিত্বের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু সেদিন থেকে আজ অবধি আমরা আমাদের দেশকে দেশের নেতাকে গুরুত্ব দিলাম কই?
১৭৫৭ সালের পরে কি আজ অবধি কোনো সুসন্তান কিংবা সুপুরুষ বাংলার জমিনে পয়দা হয় নাই? অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু আমরা আর তার পথ সুগম করলাম কই? আমরাও তো সেদিন নবাবকে ব্রিটিশরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় যে বাঙালিরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিল, তাদের ভূমিকায়ই এখনো আছি। আমরা যদি জেগে উঠি, তবেই তো নতুন সূর্যোদয় আমাদের হাতেই উদিত হবে। তবেই তো দেশ, জাতি, মা-মাটি আমাদের আগলে রেখে বলবে এরা আমার সূর্যসন্তান। কিন্তু হায়, আমরা সে পথে তৈরি করিনি। আমরা বারে বারে সে মহান নেতাদের আদর্শের সঙ্গে বেইমানি করেছি। আমরা শুধু কথায় তাদের পাশে ছিলাম, কাজের সময় শূন্য। আমরা সাধারণ জনতা কিংবা বাসিন্দারা যদি একটু সচেতন থাকতাম, তাহলে আর আমাদের ভাবতে হতো না। কবে এলাকার চেয়ারম্যান দরিদ্র-হতদরিদ্র কৃষকদের কমমূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে চাল দেবেন। কেননা, দরিদ্র-হতদরিদ্রদের কমমূল্যে চাল পাওয়া তাদের অধিকার। সরকার থেকেই সে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়, শুধুমাত্র ভুল নেতা নির্বাচনের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এতে আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক জীবনের শিক্ষা হচ্ছে, আমরা যদি সঠিক, সৎ নেতা নির্বাচন করে তার কর্তৃত্ব মেনে চলতাম, যোগ্য নেতা- নেতৃত্বের মূল্যায়ন করতাম, তাহলে জনগণের ম্যান্ডেটে রাষ্ট্র পরিচালিত হতো আর কোনো নেতা আমাদের ছেড়ে পালিয়ে যেতেন না কিংবা পালানোর সাহস পেতেন না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন