বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৯:৩৫ এএম

বর্জ্যে দূষিত নদীর পানি

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৯:৩৫ এএম

রাজশাহী

রাজশাহী

**** স্বাস্থ্যঝুঁঁকিতে রাজশাহী ও নাটোরের সাড়ে তিন লাখ মানুষ
**** দেখা দিয়েছে চর্মরোগ, ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগ
**** পানি ব্যবহার ও মাছ খাওয়ার কারণে দেখা দিচ্ছে চর্মরোগ

রাজশাহী মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল ও কলকারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে পদ্মা নদীর শাখা নদী বারনইসহ শহরের বিভিন্ন খাল ও নদীতে। ফলে নদীর পানি দীর্ঘ সময় জমাট বাঁধার কারণে বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং শ^াসপ্রশ^াসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এর প্রভাব চর্মরোগ, ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হচ্ছে।

জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বারনই নদী। এই দূষিত পানি ব্যবহার করে নদী পাড়ের রাজশাহী ও নাটোরের ৭ উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। নদীতে গোসল করে কিংবা দৈনন্দিন কাজে এর পানি ব্যবহার করে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগে। দূষণের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে গবাদিপশু ও ফসলের মাঠে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীববৈচিত্র্য। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত রোববার পবার নওহাটা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী এক চর্মরোগ চিকিৎসাবিষয়ক ক্যাম্প। রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয় ও পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজনে সকাল থেকেই ঢল নামে শত শত অসহায় রোগীর। টাকার অভাবে তারা চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না। ফলে অনেক কষ্টে করে তারা দিনযাপন করছেন।

ওই ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা রাজশাহী নওহাটার পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে নিয়মিত বারনই নদীতে গোসল করতাম। একদিন নদীর মরা মাছ রান্না করে খেয়েছিলাম। তারপর থেকেই এই চুলকানি রোগে ভুগছি। চামড়া উঠে যাচ্ছে, অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। একই এলাকার নূরজাহান বেগম জানান, নদীতে গোসল করার পর থেকেই তার শরীরে দাউদের মতো দাগ হয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না।

রাজশাহী মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং কলকারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত বর্জ্য দুটি প্রধান খালের মাধ্যমে সরাসরি বারনই নদীতে চলে যায়। ফলে নগরী ঘেঁষা রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা, পুঠিয়া এবং পাশর্^বর্তী নাটোরের দুটি উপজেলার নদীপাড়ের গ্রামগুলোতে চর্মরোগের পাশাপাশি ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব এলাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ সরাসরি এই বিষাক্ত নদীর পানি থেকে বিভিন্ন রোগবালাই ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিনযাপন করছেন। 

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এসআইএম রাজিউল করিম বলেন, এখানে আসা অধিকাংশ রোগাক্রান্ত ব্যক্তি জানিয়েছেন, নদীর পানি ব্যবহার ও মাছ খাওয়ার কারণে তাদের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আরও ক্যাম্প করা হবে। এ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে নদী দূষণের কারণে শুধু মানুষই নয়, বিপন্ন হয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকাও। নওহাটার জেলেরা জানান, কয়েক বছর ধরে বিষাক্ত পানিতে নদী-নালা, খাল-বিলের মাছ মরে যাচ্ছে। সরকারিভাবে পোনা ছাড়লেও তা বাঁচে না। যে খালের মাছ ধরে একসময় সংসার চলত, এখন সেই খালের পানি শরীরে লাগলেই ঘা-চুলকানি হয়। তাই মাছ ধরে বিক্রি করা বন্ধ হয়ে গেছে।

নদী গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার উচিত নগরীর তরল বর্জ্য পরিশোধন করে নদীতে ফেলা। তা না হলে আগামীতে আরও বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, তরল বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতার দিকে তাকিয়ে না থেকে জরুরি ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের এই সংকট নিরসনে বর্জ্য ফেলা বন্ধে যুতসই পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!