মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য দুটি পদে বর্তমানে চার শিক্ষক যোগ দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। তাদের কেউ বলছেন, অনলাইনে আবেদন করে যোগদানপত্র পেয়েছেন আবার কেউ বলছেন, সরাসরি যোগাযোগ করে আদেশপত্র নিয়েছেন।
চার সহকারী শিক্ষকই বিদ্যালয়ে থাকতে চান। এ কারণে তারা হয়ে উঠেছেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। যোগদানকৃত চারজন শিক্ষকই নিজেদের বৈধ দাবি করলেও বিদ্যালয়ে দুটি শূন্য পদে যোগ দেবেন মাত্র দুজন শিক্ষক।
এমন পরিস্থিতিতে একদিকে বিদ্যালয়টিতে যেমন লেখাপড়া বিঘিœত ঘটছে, অন্যদিকে বদলি জটিলতায় তাদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজল। দাপ্তরিক আদেশে তিনি চার শিক্ষকের যোগদানপত্র নিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্তরা সঠিক পন্থায় যোগ দিয়েছেন, বাকি দুজন বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন, তাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন অবসরে যান গত বছরের ১৫ নভেম্বর। আর ফেরদোসী আরা অবসরে যান চলতি বছরের ২ জানুয়ারি। অবসরজনিত কারণে শূন্য দুটি পদে যোগ দিতে অনলাইনে আবেদন করেন আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন, ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা শিউলি খাতুন, ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক লিলুফা ইয়াসমিন, বড়গাংনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুনসহ মোট ৩১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন, স্মারক নং-১২০(২১) ও শিউলি খাতুনকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি আদেশে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক তারা বিদ্যালয়ের শূন্যপদে যোগ দেন।
এদিকে ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিনও প্রথমে আবেদন করেন অনলাইনে। পরে বদলির আদেশ না পেয়ে তিনি অফলাইনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগদানপত্র নিয়ে আসেন। আবার আগে থেকে একটি পদে জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শাম্মিয়ারা দিপ্তি ডেপুটেশনে যোগ দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষিকা সুমাইা নাসরিন বলেন, ‘আমি অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নিয়মনীতি ও সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। কিন্তু অজানা এক ক্ষমতার বলে আমাকে আগের স্থলে যেতে বলা হচ্ছে। আমি যেহেতু সর্বপ্রথম অনলাইনে যোগ দিয়েছি, সেহেতু আমি এখানেই থাকতে চাই। আমাকে এখান থেকে সরানোর জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করছেন।’
লিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালয়ে যোগ দিতে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করি। সেই আবেদন ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরে অফলাইনে (সরাসরি) যোগাযোগের মাধ্যমে যোগ দেওয়ার আদেশ নিয়ে আসি। সদ্য বদলি হয়ে আসা শিক্ষিকা শিউলি খাতুন বলেন, ‘আমি ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ বছর চাকরি করেছি। বয়স ও দূরত্বের বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক আমাকে অধিদপ্তর থেকে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আদেশ পেয়েছি।
শিক্ষিকারা জানান, এখানে চারজনকে একই পদে বদলি করা হয়েছে। তবে এটি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে এমন বিড়ম্বনার তৈরি হয়েছে। অধিদপ্তর যোগদান করাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু পদ শূন্য করে রাখা হয়েছে। ফলে একাধিক পদে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অতি চতুরতার কারণে মেহেরপুরের বিভিন্ন স্কুলে এমন ঘটনা ঘটছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজল বলেন, ২০২৪-২৫ সালে দুটি শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে কয়েক দিন পর শাম্মিয়ারা দিপ্তিকে ডেপুটেশনে দেন। এর কয়েক দিন পর অনলাইনের আবেদনের ভিত্তিতে যোগ দেন সুমাইয়া নাসরিন। তার কিছু দিন পর লিলুফা ম্যাডাম অধিদপ্তর থেকে ডেপুটেশনে আসেন। এভাবে চারজনকে অধিদপ্তর এখানে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে একজন ডিস্ট্রিক্ট ট্রান্সফারড আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, যারা অনলাইনে আগে আবেদন করে যোগ দিয়েছেন তারাই কারেক্ট। যারা পরে আবেদন করেছেন তারা থাকবে না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন