বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

সর্বত্র রক্ত মৃত্যু আর ক্ষুধার চিহ্ন 

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

গাজা

গাজা

তালাল আল-মাসরি। যুদ্ধের আগে তার ওজন ছিল ৭৮ কেজি। গাজার এই বৃদ্ধের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মানবতার মৃত্যু কেমন দেখতে হয়। খাবারের অভাবে মৃত্যুর সময় সেই ওজন কমে মাত্র ৪২ কেজিতে দাঁড়িয়েছিল। তালাল আল-মাসরি খাবারের অভাবে, ক্ষুধার যন্ত্রণা সয়ে সয়ে তিনি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলেন। একসময় তাঁর দেহ আর এই যন্ত্রণার ভার বইতে পারেনিÑ শহিদ হয়ে চলে গেলেন। এটি শুধু একটি মৃত্যুর খবর নয়, এটি নিদারুণ দুর্ভিক্ষের কালো প্রমাণ। গাজার প্রতিটি গলি, প্রতিটি ভাঙা ঘর, প্রতিটি ক্ষুধার্ত মুখ যেন নীরবে চিৎকার করছেÑ ‘আমরা বাঁচতে চাই!’ গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অনাহারে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যামূলক হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৬৩ হাজার ৫৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে আরও ৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় এক গর্ভবতী নারী ও তার অনাগত শিশু নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় খাদ্য অবরোধে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে, যা জাতিসংঘ ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

শুধু খাদ্যাভাব ও অনাহারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩ শিশুও রয়েছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অনাহারসংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ জনে, যার মধ্যে ১২৭ জন শিশু। মার্চের শুরু থেকে গাজার সব সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ায় ২৪ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এক খাদ্য নিরাপত্তা জরিপ ইতিমধ্যেই উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত করেছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ তা আরও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে। গাজায় পর্যাপ্ত খাবার নেই। কোনো কিছু কেনার মতো সামর্থ্যও নেই।

ফিলিস্তিনের আরেক বৃদ্ধ রিয়াদ আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন অর্ধেক রুটি খাই। কারণ এর বেশি আমাদের কাছে নেই। কখনো কখনো শুধু লবণ খেয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আগে আমার হাত মাংসে ভরপুর ও শক্তিশালী ছিল। এখন সেগুলো কেবল চামড়া আর হাড়।’ শুধু রিয়াদই নন, ক্ষুধার কারণে চরম দুর্দশার মুখে পড়েছেন গাজার বৃদ্ধরা। শুকিয়ে দিন দিন কঙ্কালসার হচ্ছেন তারা। ‘জীবন্ত কঙ্কাল’ হয়েই কোনোরকমে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে। খবর আলজাজিরা ও এএফপির। রিয়াদের স্ত্রী নাদিয়া আবু শাবান বলেছেন, ‘কখনো কখনো রাতের খাবার ছাড়াই আমরা ঘুমাই। আমাদের কাছে সত্যিই খাবার নেই।’ এদিকে গাজার বৃদ্ধাশ্রমগুলোতেও বয়স্কদের সেবা করার সুযোগ কমে গেছে। একটি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক আশরাফ হামাদা আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা ক্ষুধা ও অনাহারের কারণে পাঁচজন বৃদ্ধকে হারিয়েছি।

আমাদের কাছে কোনো মৌলিক জিনিসপত্র নেই। বাজারে বা দাতব্য রান্নাঘরেও কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।’ ক্ষুধায় ভুগছে গাজার শিশুরাও। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সিটিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সোমবার শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরের কাছে এক গর্ভবতী নারী ও তার অনাগত শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। একই হামলায় আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

একই দিন ইসরায়েলি বাহিনী শহরের দক্ষিণাংশের জাইতুন ও সাবরা এলাকায় বোমা বর্ষণ অব্যাহত রাখে। গত মাস থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবারের হামলায় সেখানেই অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। দিনের শুরুতে নাসের স্ট্রিটের ব্যস্ত বাজারে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায়। আলজাজিরার সাংবাদিক মোয়াথ আল-খালুত জানান, বাজারে ইসরায়েলি হামলার পর অন্তত চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। আতঙ্কে মানুষ চারদিকে ছুটতে থাকে। তিনি বলেন, ‘মানুষ জানে না কোথায় যাবে, কী করবে। তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা শহরের প্রতিটি কোনায় হামলা চালাচ্ছে।’ শহরের দক্ষিণে দেইর আল-বালাহ এলাকায় আল-মাজরা স্কুলে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করেও হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতাল আনাস সাঈদ আবু মুগসিব নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!