ইন্দোনেশিয়ান সরকার সংসদ সদস্যদের জন্য রাজধানীর সাধারণ চাকরিজীবীদের ন্যূনতম মজুরির প্রায় দশ গুণ বেশি বেতন নির্ধারণ করে প্রতি মাসে, এ ছাড়া বিতর্কিত গৃহনির্মাণ ভাতাসহ আরও বেশ কিছু উচ্চাবিলাসী সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করে পার্লামেন্ট মেম্বারদের জন্য। আর এতেই ক্ষোভ ফুঁসে ওঠে দেশটির ছাত্র-জনতা থেকে শুরু করে সাধারণ আমজনতাও। এটি নিয়েই দেশটির রাজধানী জাকার্তায় ২৫ আগস্ট আন্দোলনে নামে সাধারণ ছাত্র-জনতা।
এই আন্দোলনের সময়ই এক সাধারণ ডেলিভারি চালকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায়। ওই তরুণের মৃত্যু জনতাকে যেন আগুনে পরিণত করে। সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। চলমান এই সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে সহিংস জনরোষে। দেশজুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ও ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনে জ্বলে উঠেছে সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রী, সরকারের আমলাদের ঘরবাড়ি, সরকারি অফিস ও অবকাঠামো। সংসদ ভবনও জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, শ্রমিকরা। এমনকি অর্থমন্ত্রী শ্রী মুলিয়ানি ইন্দ্রাবতীর বাড়িতে লুটপাট করা হয়, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তিনি বাড়িতে ছিলেন না এবং বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতার বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে, যেসব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এখন। চলমান এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন, আহত শত শত। নিখোঁজ রয়েছে ২০ জনেরও বেশি। আর এতে বড় ধরনের চাপে পড়েছেন সদ্য ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো।
গত ২৫ আগস্ট রাজধানী জাকার্তায় শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ২০ জন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে। ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মূলত সংসদ সদস্যদের প্রতি মাসে প্রায় ১০০ মিলিয়ন রুপিয়া (৬,১৫০ মার্কিন ডলার) ভাতা নেওয়া নিয়ে ক্ষোভ থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাতা জাতীয় গড় আয়ের প্রায় ৩০ গুণ বেশি, যা সাধারণ মানুষের অসন্তোষ উসকে দেয়। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ক্ষমতায় আসার পর এটিই তার শাসনামলের সবচেয়ে বড় ও সহিংস বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার এক মানবাধিকার সংস্থা জানায়, আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে।
প্রতিবাদের ঢেউ প্রথমে রাজধানী জাকার্তা থেকে শুরু হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশজুড়ে। সুলাওয়েসি, জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিওÑ সব প্রদেশেই রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো বিক্ষোভকারী। মাকাসার শহরে কাউন্সিল ভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, এতে অন্তত ৩ জন নিহত হন। যোগ্যাকার্তা ও সোলো শহরে সংঘর্ষে প্রাণ হারায় আরও ২ জন। এমপি-মন্ত্রীদের বিলাসবহুল বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন