মানবজীবনে চারটি মৌলিক বিষয় মাতৃগর্ভে থাকাকালেই লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। রিজিক, আয়ু, কর্ম এবং সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য। এই লিপিবদ্ধ বিষয়গুলো আমাদের জীবনকে পরিচালিত করে এবং আমাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মপদ্ধতিতে গভীর প্রভাব ফেলে।
রিজিক ও পরিতুষ্টি
আমাদের প্রত্যেকের রিজিক পূর্বনির্ধারিত। এর অর্থ এই নয় যে আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকব। বরং, এর দ্বারা আমাদের প্রতি পরিতুষ্টির গুণ অর্জনের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অহেতুক লোভ, বাড়তি উপার্জনের জন্য উন্মত্ততা বা বাড়াবাড়ি পরিহার করা উচিত। চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে, তবে যা অর্জিত হয় তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং আরও কেন অর্জিত হলো না এই আক্ষেপ থেকে বিরত থাকা জরুরি। যখন আমাদের রিজিক নির্দিষ্ট, তখন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা উচিত।
আয়ু ও আল্লাহর ফয়সালা
পৃথিবীতে কে কতদিন বাঁচবে, তাও লিখে দেওয়া হয়। প্রত্যেকের আয়ু নির্দিষ্ট; এক মুহূর্ত বেশিও নয়, কমও নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যখন তাদের সেই নির্দিষ্ট সময় এসে পড়ে, তখন তারা এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং ত্বরাও করতে পারে না। (সুরা আরাফ, ৩৪) সুতরাং কারো মৃত্যু হলে তা আল্লাহরই ফয়সালা হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত। এমন কোনো কথা বলা ঠিক নয় যা তাকদির বা আল্লাহর ফয়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ বলে মনে হয়। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না। ছোটখাটো আঘাত থেকে শুরু করে বড় কোনো অর্জন বা ক্ষতি সবই তাকদির অনুযায়ী ঘটে থাকে।
কর্ম ও সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য
মাতৃগর্ভে এটাও লেখা হয় যে, কে ভাগ্যবান আর কে হতভাগ্য। এর অর্থ হলো, আমাদের আমলও লিপিবদ্ধ হয়। যার আমল ভালো, সে জান্নাত লাভ করবে এবং সেই ভাগ্যবান। আর যার আমল মন্দ, সে জাহান্নামে যাবে এবং সেই হতভাগ্য। জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশের সঙ্গে আমলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জান্নাত লাভের আকাক্সক্ষা থাকলে সৎকর্ম করা অপরিহার্য। কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই যারা বলেছে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, তারপর এতে অবিচল থেকেছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা হবে জান্নাতবাসী। সেখানে তারা থাকবে সর্বদা। তারা যা করত তার প্রতিদানস্বরূপ। (সুরা আহকাফ, ১৩-১৪)।
অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যে আমল করতে, তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর। (সুরা যুমার, আয়াত ৭৩) তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে কোনো কোনো হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ নিজ আমল দ্বারা মুক্তি পাবে না।
শেষ মুহূর্তের আমলের গুরুত্ব ও প্রার্থনা
হাদিসে এসেছে, ‘বান্দার আমল ও তার সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য সম্পর্কিত লিখনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে লিখন জয়ী হয়ে যায়। তার পর বান্দা সে লিখন অনুযায়ীই আমল করতে থাকে।’ এর অর্থ হলো, আমাদের শেষ সময়ের আমলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সারা জীবন ভালো আমল করার পরও যদি সৎকর্মের অবস্থায় মৃত্যু না হয়, তবে পরিণাম আশঙ্কাজনক। তাই আত্মমুগ্ধতা বা গর্ব পরিহার করে সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত যেন সৎকর্মে অবিচল থাকা যায়। নবী কারিম (সা.) দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তর আপনার দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। তিনি নিজেও এই দোয়া খুব বেশি পড়তেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন