রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম

সরকারি হাসপাতালে দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম

সরকারি হাসপাতালে দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের শেষ ভরসার জায়গা। স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীরা উন্নত চিকিৎসার আশায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভিড় জমায়। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করার পরই তারা পড়েন দুর্ভোগের মুখে। হাসপাতালের দরজা থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, পরীক্ষাগারসহ সব জায়গায় সক্রিয় এক অঘোষিত নেটওয়ার্ক, যাদের নাম দালাল। তারা রোগী ও স্বজনদের বিভ্রান্ত করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় কিংবা কমিশনভিত্তিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করে।

গতকাল শনিবার দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে ‘দালাল থাকাটাই যেন হালাল’ শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদেেন উঠে আসে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় দালাল চক্রের নেটওয়ার্কের ভয়াবহ চিত্র।  

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে রোগী সেবার পাশাপাশি সক্রিয় অঘোষিত দালাল চক্রের নেটওয়ার্ক। এরা মূলত রোগী ও স্বজনদের বিভ্রান্ত করে প্রাইভেট ক্লিনিক বা নির্দিষ্ট ডাক্তারদের চেম্বারে পাঠায়। কখনো সরকারি সেবার প্রাপ্যতা গোপন করে, আবার কখনো হাসপাতালের ভেতরের অসাধু কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়ে নেয় অর্থ। নানা সংকটে জর্জরিত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো সীমিত সাধ্যের মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে তৎপর থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা রোগীরা যেন জিম্মি এ দালাল চক্রের হাতে।

এটি নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং এক ধরনের প্রতিষ্ঠিত সিন্ডিকেট। অভিযোগ আছে, হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, অফিস সহকারী এমনকি কিছু চিকিৎসকও এদের সঙ্গে যোগসাজশে থাকে। ফলে রোগীকে সরকারি হাসপাতালে যে সেবা বিনা মূল্যে বা স্বল্প খরচে পাওয়ার কথা, তার জন্য বহুগুণ খরচ করতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয়, এতে রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত হয়, কখনো ভুল চিকিৎসারও শিকার হন তারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব ও অশিক্ষিত রোগী, যাদের পক্ষে প্রতারণা বোঝা সম্ভব হয় না।

অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেপ্তার করা হলেও সমস্যা মেটে না। ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- শেষ করে তারা আবারও আগের জায়গায় ফিরে আসে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ প্রমাণ করে, আইনের দুর্বলতা তারা ভালো করেই জানে। এ চক্রের মদদপুষ্টরা হাসপাতাল এলাকার ভেতর-বাইরে নির্বিঘেœ কাজ চালিয়ে যেতে পারে বলেই তারা এতটা বেপরোয়া।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলোয় দালালদের প্রকাশ্য দৌরাত্ম্য বহুদিনের অভিযোগ। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও স্বীকার করেছে এ সমস্যা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এত অভিযানের পরও কেন স্থায়ী সমাধান আসছে না? এর জবাব লুকিয়ে আছে দুর্বল আইন প্রয়োগ, ভেতরের অসাধু কর্মীদের শাস্তিহীনতা এবং প্রশাসনিক শৈথিল্যে।

জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দালাল চক্র। তাই শুধু মাঝেমধ্যে অভিযান নয়, প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান। আইন সংশোধন করে দালালি কার্যক্রমকে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। হাসপাতালের ভেতরের অসাধু কর্মীদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতাল এলাকায় সিসিটিভি নজরদারি, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং ডিজিটাল তথ্যসেবা চালু করা যেতে পারে, যাতে রোগীরা বিভ্রান্ত না হন।
সবচেয়ে জরুরি হাসপাতালের পরিচালক ও কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির মধ্যে আনা। কোনো হাসপাতালে দালাল চক্রের উপস্থিতি মানে শুধু রোগীর দুর্ভোগ নয় বরং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতারও পরিচয়। 

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, স্বাস্থ্যসেবা কোনো পণ্য নয়, এটি নাগরিক অধিকার। প্রশাসনিক কঠোরতা এবং জনসচেতনতা ছাড়া এ সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়।

আমরা মনে করি, সরকার যদি সত্যিই ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ নিশ্চিত করতে চায়, তবে প্রথমেই তাকে হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা কোনো পণ্যে পরিণত হোক, তা কখনোই কাম্য নয়। সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীদের আস্থা ফেরাতে এ দালাল চক্রকে এখনই নির্মূল করতে হবে। অন্যথায় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের ভরসা আরও কমে যাবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!