বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


   তানভীর ইসলাম কাওছার, শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

বিএনপি-আওয়ামী ঐক্যে বালু লুট শ্রীমঙ্গলে 

   তানভীর ইসলাম কাওছার, শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

বিএনপি-আওয়ামী ঐক্যে বালু লুট শ্রীমঙ্গলে 

আইন অনুযায়ী সেতু কালভার্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় নাই। এই উপজেলার ছোট-বড় বিভিন্ন ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। সিন্দুরখান ইউনিয়নের লাইংলা ছড়া ও উদনা ছড়া এলাকায় সেতুর কাছ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। একই চিত্র দেখা গেছে আশিদুন ইউনিয়নের বিলাসছড়া সেতু এলাকায়। এভাবে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে চলছে এসব। এতে উপজেলার কয়েক জায়গায় ব্রিজ ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি ব্রিজ ও কালভার্ট। বাড়ছে ছড়া ভাঙনের শঙ্কাও। হুমকির মুখে পড়েছে বাড়ি-ঘরসহ ফসলি জমি। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও থামানো যাচ্ছে না বালুখেকোদের। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জাতীয় রাজনীতিতে ঐক্য না থাকলেও বালু লুটে নেতাদের রয়েছে সর্বদলীয় ঐক্য। বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির রয়েছে কঠিন ঐক্য। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও নতুন করে সর্বদলীয় এক্যৈ ফের শুরু হয় লুটাপাট। বালু লুটের জন্য এমন ঐক্যকে লজ্জাজনক বলছে সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বালুর ঘাট থেকে ইজারা ছাড়াই দিনের পর দিন অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এবং দৈনিক শ্রমিক দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের লাংলিয়া ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন বিএনপির নেতা লোকমান, আওয়ামী লীগ নেতা সুজন, ময়না, শামীম এবং স্টিল ব্রিজের দক্ষিণে মিল্লাদ মিয়া, উওর দিকে পারভেজ ও লিটন মিয়া। লাংলিয়া ছড়ার পাশের বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখা বালু।

উদনাছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বিএনপি নামধারী নেতা কুতুব উদ্দিন, আওয়ামী নেতা উয়াসিম মিয়া। বালু রাখা হয়েছে উদনাছড়ার পাশের বিভিন্ন স্থানে। আমরাইল ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন সৈয়দ আলী। পাশের লেবুবাগানে সারি সারি স্তূপ করে রাখা হয়েছে বালু।

ভুনবীর ইউনিয়নের জৈতাছড়া থেকে বালু উত্তোলন করছেন বিএনপি নামধারী নেতা ইব্রাহিম মিয়া। বিএনপি নামধারী আরেক নেতা শাকিল মিয়ার সঙ্গে ঐক্য গড়ে ব্যবসা করছেন ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌস আহমেদ। এ ছাড়া আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিব মেম্বারের ভাতিজা বিলাসছড়া ও লাইংলা এবং গুপলা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। একই ইউনিয়নের পুঁটিছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন হেকিম মিয়ার ছেলে রুকন মিয়া। হেকিম মিয়ার লেবুবাগানে বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

বালু তোলার ফলে এসব ছড়ার অনেক জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। বালু বিক্রির জন্য গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে দিনরাত চলছে ট্রাক। এতে গ্রামের রাস্তাগুলো ভেঙে যাচ্ছে।

একটি এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন সাফাত আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ট্রাক বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে শহরের প্রভাবশালী মহল থাকায় এলাকার লোকজন কথা বলতে পারে না। বালুর ট্রাকগুলো এতই বেপরোয়া যে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গ্রামীণ রাস্তার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট আর একটি ট্রাকের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। রাস্তা দিয়ে যখন বালুবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে, তখন বাচ্চাদের রাস্তা থেকে নেমে উঁচু-নিচু জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মৌলভীবাজার জেলার সমন্বয়কারী সালেহ সোহেল জানান, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বালুখেকোদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যাচাইয়ের পর বলতে পারব।’ 

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী শ্রীমঙ্গলে গত এক বছরে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ৭১ হাজার ৭৮৫ ঘনফুট বালু জব্দ করে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ১৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বালু উত্তোলন না করতে  মুচলেকা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি কর্তৃক (বেলা) হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২৭টি সিলিকা বালুর ছড়া ইজারা বন্দোবস্তের স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে উচ্চ আদালত ইনভায়রনমেন্টাল ইম্পেক্ট এসেসমেন্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে ছড়াসমূহ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করে রায় দেন। একই সঙ্গে ছড়াসমূহ থেকে সব ধরনের ড্রিল, ড্রেজার, বোমা মেশিন এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত যন্ত্রিক মেশিনসমূহ অবিলম্বে জব্দ করার জন্য নির্দেশ দেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!